আরজি কর হাসপাতালের সামনে পুলিশি কড়াকড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদ কোন পথে এগোবে, সেই বিষয়ে একমত হতে পারলেন না পড়ুয়ারা। শনিবার সন্ধ্যায় কার্যত ভেস্তে গেল ডাক্তারির পড়ুয়াদের 'জেনারেল বডি' (জিবি)-র বৈঠক। মাঝে পরিস্থিতি এমন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, পুলিশের একটি দলকে সেখানে ছুটে যেতে হয়।
আরজি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদ আন্দোলনের রূপরেখা স্থির করতে জিবি বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন ডাক্তারির পড়ুয়ারা। আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে হওয়া এই বৈঠকে ওই হাসপাতালের ছাত্র সংগঠনের পড়ুয়া ছাড়াও মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএসের পড়ুয়ারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বৈঠকে আন্দোলনের ধরন এবং প্রকৃতি নিয়ে কোনও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি পড়ুয়ারা। পরে আরজি করের পড়ুয়ারা জানান, তাঁরা তাঁদের আন্দোলনে কোনও রাজনীতির রং চান না। তবে বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে বিশেষ কিছু জানা যায়নি।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে অবস্থানরত জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়াতে শনিবার বিকেলে হাসপাতালের কাছে পৌঁছন একাধিক বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের সদস্যেরা। স্টুডেন্টস হেল্থ হোমের চিকিৎসকেরাও ওই একই সময়ে পৌঁছে যান আরজি করের সামনে। তাঁদের মধ্যে আরজি করের প্রাক্তনীরাও ছিলেন। তাঁরা ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করতেই শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্ত ‘খণ্ডযুদ্ধ’। পুলিশ তাঁদের বাধা দিতেই শুরু হয় ধস্তাধস্তি। চলে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা। ‘বহিরাগত’ আন্দোলনকারীদের আরজি করের ভিতরে প্রবেশ আটকাতে দীর্ঘ ক্ষণ সমর্থ হন পুলিশকর্মীরা। পরে ফের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা শুরু হয়। বেশ কয়েক জন ‘বহিরাগত’ আন্দোলনকারীকে আটক করে আরজি করের ভিতরে নিয়ে যান পুলিশকর্মীরা।
পুলিশ যখন ব্যারিকেড করে ‘বহিরাগত’দের আটকানোর চেষ্টা করে, তখন আরজি করের ভিতর থেকেও অবস্থানরত চিকিৎসক-পড়ুয়াদের একাংশ এগিয়ে আসেন। ‘বহিরাগত’দের প্রবেশে আপত্তি জানান তাঁরা। আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকদের বক্তব্য, তাঁরা এই আন্দোলনে কোনও রাজনীতির রং লাগতে দেবেন না। যদি কেউ আন্দোলনে শামিল হতে চান, সে ক্ষেত্রে রাজনীতির রং নিয়ে নয়, সাধারণ নাগরিক হিসাবে যেন শামিল হন আন্দোলনে। বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের বিরুদ্ধে স্লোগানও ভেসে আসে আরজি করের ভিতর থেকে।
‘বহিরাগত’ বিক্ষোভকারীদের অবশ্য দাবি, এই আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে রাজ্যের শাসক শিবির। পুলিশ ‘বহিরাগত’ বিক্ষোভকারীদের আরজি করের বাইরে থামিয়ে রাখতে সমর্থ হলেও প্রথমে জমি ছাড়তে নারাজ ছিলেন বিক্ষোভকারীরাও। হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করতে না দেওয়া পর্যন্ত পিছু হটবেন না বলে একটা সময় পর্যন্ত তাঁরা অনড় ছিলেন। পরে অবশ্য আরজি করের সামনে থেকে বিক্ষোভকারীদের ভিড় পাতলা হতে থাকে। সাদা পোশাকের পুলিশের দখলে চলে যায় গোটা এলাকা।