মাদারিহাট হাই স্কুলের সামনে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।
‘স্কুল চলে হম...।’
ঘুম থেকে উঠে স্কুল যাওয়ার প্রস্তুতি, করোনা বিধি মেনে স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা, খেলাধুলো, বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড়— একের পর এক দৃশ্য। আর সঙ্গে স্কুল খোলার আর্তি। সবটাই হল এই গানের সুরে, নাচের তালে।
প্রায় দেড় বছর রাজ্যে স্কুল বন্ধ। এই অবস্থায় পড়াশোনার কাঠামো কতটা অটুট আছে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্য সরকার পুজোর পরে স্কুল খোলার কথা ভাবলেও এই নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তারই মধ্যে স্কুল খোলার আর্জি নিয়ে অভিনব একটি অনুষ্ঠান করল কয়েক জন স্কুলপড়ুয়া।
দিনটা রবিবার, শিক্ষক দিবস। মাদারিহাট হাই স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির গুটি কয়েক পড়ুয়া এর মধ্যেই হাজির হন স্কুলের বন্ধ সদর দরজার সামনে। সেখানে এর পরে শুরু হয় সুর ও ছন্দের তালে সেই বন্ধ দরজা খুলে স্কুল বসানোর আর্জি। তা দেখতে ভিড় জমান বেশ কিছু পথচারী। পুরো অনুষ্ঠানটির ভিডিয়ো করে তা সমাজমাধ্যমে দেওয়া হয়। দ্রুত অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়ে সেটি। পড়ুয়ারা তো বটেই, শিক্ষক ও জেলা শিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশও ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
কেন এমন ভিডিয়ো বানাল তারা। একাদশ শ্রেণির ছাত্র রূপম বর্মণ নাচে অংশ নিয়েছে। সে বলল, “বাড়িতে এই বন্দিদশা ভাল লাগছে না। তাই আমরা কয়েক জন সহপাঠী শিক্ষক দিবসে স্কুল খোলার আর্জি নিয়ে কিছু একটা অনুষ্ঠান করার কথা ভাবি। তখনই এই গানের সঙ্গে নাচটি করার হবে বলে ঠিক হয়।’’
আর এক ছাত্রী মালবিকা নাহা-র কথায়, “আমরা যারা দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ি, মাস কয়েক পরে উচ্চ মাধ্যমিক। তাই শিক্ষকদের কাছে দ্রুত স্কুল খোলার আর্জি জানাতেই এই নাচের আয়োজন করি।’’ মালবিকা জানায়, নাচে সাহায্য করেন শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় সাহা। সে কবুল করেছে, ‘‘সমাজমাধ্যমে এই নাচটি যে এতটা হইচই ফেলবে, ভাবতে পারিনি।” মৃত্যুঞ্জয় বলেন, “শিক্ষক দিবসে স্কুল খোলার আর্জি জানিয়ে ওরা একটি নাচের আয়োজন করতে চেয়েছিল। আমি সাধ্যমতো সাহায্য করি।” বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ সরকার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকার যন্ত্রণা পড়ুয়াদের কাছে কতটা, ওদের অনুষ্ঠানটাই তা বলে দিচ্ছে।”
অনেকের মতো ফেসবুকে নাচের ভিডিয়োটি পোস্ট করেছেন খোদ আলিপুরদুয়ার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আশানুল করিম। তিনি লিখেছেন, “মাদারিহাট হাই স্কুলের বাচ্চারা কোভিড বিধি মেনে জানালো এই কাতর আর্তি। সব বাচ্চারই এখন একটাই স্বপ্ন— করোনা চলে যাক, স্কুল চলে হাম।”