ছাত্রনেতা সায়ন লাহিড়ীর জামিনের বিরোধিতায় করা মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে। — ফাইল চিত্র।
‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়ীর ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল রাজ্য সরকার। সেই মামলা খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। বহাল রইল কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ। আদালত জানাল, ওই ছাত্রনেতার (সায়ন) জামিন মঞ্জুর হওয়াই উচিত।
‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর নবান্ন অভিযানে গোলমালের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সায়নকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। সোমবার বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে শুনানি ছিল সেই মামলার। শুনানিতে হাই কোর্টের নির্দেশের বিরোধিতা করায় প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি সায়নের গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি পারদিওয়ালার প্রশ্ন, ১০০ জনের মধ্যে ওই ছাত্রনেতাকে পুলিশ কেন গ্রেফতার করল?
তার পরই কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ উল্লেখ করে বিচারপতি পারদিওয়ালার মন্তব্য, ‘‘ওই ছাত্রনেতার জামিন মঞ্জুর হওয়াই উচিত। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এফআইআর খারিজের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।’’ রাজ্যের কাছে তিনি জানতে চান সায়নের বিরুদ্ধে কতগুলো এফআইআর দায়ের হয়েছে। রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে জানায়, ১১টি এফআইআর দায়ের হয়েছে সায়নের বিরুদ্ধে।
রাজ্যের আইনজীবী সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বলেন, ‘‘হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন সায়নের মা। কিন্তু তিনি কর্মসূচির ডাক দেননি। কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন সায়ন। প্রশ্ন উঠছে সায়ন নিজেই নবান্ন অভিযান কর্মসূচি করিয়েছিলেন, না কি এর নেপথ্যে অন্য কেউ আছেন?’’ যদিও রাজ্যের যুক্তিতে সায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তবে সায়নের জামিন প্রসঙ্গে বিচারপতি পারদিওয়ালা মন্তব্য করেন, ‘‘প্রথমে নগর দায়রা আদালত ও পরে হাই কোর্ট থেকে জামিন নিতে পারতেন ওই ছাত্রনেতা।’’
উল্লেখ্য, সায়নের গ্রেফতারি নিয়ে শুক্রবার প্রশ্ন তুলেছিলেন হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়েছিল, নবান্ন অভিযান কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন সায়ন। ওই কর্মসূচিতে পুলিশের কোনও অনুমতি ছিল না। এর পরও জমায়েত হয়েছে, মিছিলও হয়েছে। বিচারপতি সিংহের এজলাসে রাজ্যের যুক্তি ছিল, ওই কর্মসূচি কোনও ভাবেই শান্তিপূর্ণ ছিল না। সায়নের গ্রেফতারির পক্ষে যুক্তি সাজাতে, ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্বও সংযোজনের চেষ্টা করেছিলেন রাজ্যের আইনজীবী। তবে বিচারপতি সিংহের প্রশ্ন ছিল, সায়ন কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কি না। জবাবে রাজ্য জানিয়েছিল, তিনি ছাত্রনেতা। এ কথা শুনে বিচারপতি ফের প্রশ্ন করেন, সে ক্ষেত্রে সায়নকে কী ভাবে ‘প্রভাবশালী’ বলা হচ্ছে? রাজ্যের যুক্তি ছিল, সায়ন প্ররোচনামূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। তবে রাজ্যের যুক্তি টেকেনি বিচারপতি সিংহের এজলাসে।
ধৃত সায়নের মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। আরও বলা হয়েছিল, আদালতের নির্দেশ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। আদালতের নির্দেশ মতো শনিবার দুপুরেই জেল থেকে ছাড়া পান সায়ন। তার পরই হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এ বার সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। তবে শীর্ষ আদালতে রাজ্যের আবেদন খারিজ হয়ে গেল।