বাবা-মায়ের সঙ্গে আসাদুল।নিজস্ব চিত্র
আটটা পেট চালানো যে কতটা কষ্টের মধ্যবয়স্ক বাবলু আলি খান তা ঠারেঠোরে টের পেয়েছেন। অভাবের সংসারে যে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখা উচিত নয়, তা জানতেন। কিন্তু, হাল ছাড়েননি। হাল ছাড়েননি তাঁর ছেলেরাও। অভাব উপেক্ষা করে তাঁর এক ছেলে আজ তাই ডাক্তারির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
আসাদুল আলি খান। পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানার রামনগর গ্রামের বাসিন্দা। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পড়ছেন। ২০১৫-য় জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ১৪২৪ র্যাঙ্ক করেন তিনি। কিন্তু কত দূর এ ভাবে চালাতে পারবেন তা জানেন না। কারণ ডাক্তারি পড়ার খরচ অনেক। বাবা সামান্য এক কৃষক। কোনও নির্দিষ্ট উপার্জন নেই। তার উপর শুধু তো আসাদুলই নন, আরও ৬ ভাইয়ের লেখাপড়া রয়েছে। তাঁরা কেউ ফলের দোকানে কাজ করেন তো কেউ টিউশন করিয়ে হাত খরচের টাকা জোগাড় করেন। সেই সামান্য টাকার একটা অংশ আবার সংসারেও দিতে হয়। কিন্তু তাতে পড়াশোনার পাহাড়প্রমাণ খরচ চালানো দায়।
আরও পড়ুন: মমতার সামনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সুদীপ
আসাদুলের বাবা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। মা স্কুলের মুখও দেখেননি। কিন্তু লিখতে পড়তে না জানলেও পড়াশোনার গুরুত্ব কতটা তা তাঁরা খুব ভাল করেই বুঝেছেন। তাই শত অসুবিধা সত্ত্বেও ছেলেদের পড়াশোনার উপর দারিদ্রের কোনও প্রভাব পড়তে দেননি তাঁরা। আসাদুলের প্রাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে গরুও বেচে দেন তাঁরা।
বাবা বাবলু আলি বলেন, ‘‘ কোনও দিন মাছ-মাংস ঠিক করে কিনে খাওয়াতে পারিনি। তবে যে ভাবেই হোক ওদের বই ঠিক কিনে দিয়েছি।’’ আজ যখন ছেলের রেজাল্টের দিকে তাকান গর্বে বুক ফুলে ওঠে তাঁর।
তবুও চিন্তা যায় না আসাদুলের। এত পড়াশোনা, এত মার্কস পেয়ে কী লাভ, যদি এমবিবিএসটাই না সম্পূর্ণ করতে পারেন?
সারা ক্ষণ এই চিন্তাই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে তাঁকে।