নজরদারির ফাঁকফোকর আটকাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িকে কেন্দ্র ক্যামেরা বসাচ্ছে পুলিশ। ফাইল চিত্র।
মাছিদের গলে যাওয়া আটকানো যদি না-ও যায়, ক্যামেরার নজর এড়িয়ে যেতে পারবে না বিড়াল। এমনকি গাছের শুকনো পাতা পড়লেও পুলিশ অফিসারেরা নড়েচড়ে বসবেন।
দিল্লি-মুম্বইয়ের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া বিভিন্ন এলাকার পরে এমন নজরদার ক্যামেরা বসছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবাস ঘিরে। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে এমন বন্দোবস্ত এই প্রথম। নজরদারির ফাঁকফোকর আটকাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় ওই ক্যামেরাযুক্ত পিআইডিএস বা ‘পেরিমিটার ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম’ বসাচ্ছে পুলিশ। ওই বৈদ্যুতিন নজরদারি ব্যবস্থায় ৩০টি অত্যাধুনিক ক্যামেরার চোখ নিরাপত্তা রক্ষায় সদাজাগ্রত থাকবে।
কালীঘাটের যে-জনবহুল এলাকায় মমতা থাকেন, তার আশেপাশে বহু গলিঘুঁজি রয়েছে। সাধারণত মানুষ যেখান দিয়ে বিশেষ যাতায়াত করেন না। গা-ঘেঁষাঘেঁষি দুই সারি বাড়ির মাঝখানে এমন গলিপথ এত দিন রয়ে গিয়েছিল নজরদারির বাইরে।
কয়েক মাস আগেই হাতে লোহার রড নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ভিতরে রাতভর দাঁড়িয়ে ছিল এক যুবক। সারা রাত লুকিয়ে থাকার পরে তাকে গ্রেফতার করা গেলেও সেই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। কী উদ্দেশ্যে ওই যুবক সেখানে উপস্থিত হয়েছিল, অদ্যাবধি তা জানা যায়নি। তবে নজরদারির অভাব যে ছিল, সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়।
তার পরেই পিআইডিএস বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। এই অত্যাধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা বঙ্গে প্রথম। দিল্লি, মুম্বইয়ের অতন্দ্র নিরাপত্তায় মোড়া এলাকায় পিআইডিএস ব্যবহার করা হয় বলে রাজ্য পুলিশের কর্তাদের দাবি। পুলিশ জানায়, এটি একটি ক্যামেরা ও সেন্সর লাগানো ডিভাইস বা বৈদ্যুতিন যন্ত্র। তার সেন্সরের আওতায় কেউ ঢুকলেই ওই সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত কন্ট্রোল রুমে সতর্ক বার্তা পৌঁছে যাবে।
রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ডিরেক্টরেট অব সিকিয়োরিটি এবং কলকাতা পুলিশ যৌথ ভাবে প্রায় ৫৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই নিরাপত্তা প্রযুক্তি চালু করতে চাইছে। থাকবে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। পুলিশের দাবি, কেউ ওই ক্যামেরার নজরদারি এড়াতে পারবে না। মানুষের চোখ এড়িয়ে গেলেও ধরা পড়ে যাবে যন্ত্রের চোখে।
কী ভাবে কাজ করে পিআইডিএস?
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সাধারণত পিআইডিএস মোতায়েন করা হয় একটি সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে। সেই যন্ত্রের অধীন এলাকায় কেউ প্রবেশ করলে তার অন্তর্গত সেন্সর সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ করে দেয়। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির আশেপাশে অসংখ্য অলিগলিতে পুলিশের পক্ষে সব সময় নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে আবার কেউ যাতে রক্ষীদের অলক্ষে ওই এলাকায় ঢুকে পড়তে না-পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা।