প্রতীকী ছবি।
জন্ম ও মৃত্যু নথিভুক্তিকরণের সরকারি পোর্টাল হ্যাক করে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় জন্মের অনেক শংসাপত্র বার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, এই জেলাগুলির মধ্যে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি রয়েছে। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সল্টলেক সাইবার ক্রাইম থানায় এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে। দিল্লিতে রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনারের দফতরে চিঠি দিয়েও তারা বিষয়টি জানিয়েছে। সেখানকার অফিসারদের একটি দল তদন্তে সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের কথায়, ‘‘রাজ্যের তরফ থেকে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিষয়টি দেখছেন ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। কত শংসাপত্র বেরিয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। পুলিশ তদন্ত করছে।’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শোনা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আরও কয়েকটি রাজ্যে এ রকম হয়েছে। এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা জড়িত।’’ একটি মহলের আশঙ্কা, যাদের নামে ওই বার্থ সার্টিফিকেট বা জন্ম শংসাপত্র বেরিয়েছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশুরই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হয়নি। আবার এমন অনেক শিশুও থাকতে পারে, যাদের অভিভাবক অন্য রাজ্য বা অন্য দেশ থেকে এসেছেন বৈধ নথি ছাড়াই। এই ধরনের শংসাপত্রের সংখ্যা কয়েক লক্ষ হতে পারে বলেও একটি সূত্রের দাবি। আশঙ্কা, গত প্রায় তিন মাস ধরে হ্যাকিং চলেছে। সমস্যা হল, সরকারি পোর্টালে ঢুকে শংসাপত্রগুলি বার করা হয়েছে। ফলে এগুলি জাল প্রমাণ করা মুশকিল হতে পারে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘অফিস অব দ্য রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার, ইন্ডিয়া’-র আওতায় রয়েছে ‘জন্ম ও মৃত্যু নথিভুক্তিকরণ দফতর’। প্রত্যেক রাজ্যে যেমন কেন্দ্রের ‘ডিরেক্টরেট অব সেন্সাস অপারেশন’-এর আলাদা দফতর রয়েছে, তেমনই প্রতি রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কিছু অফিসারকে জন্ম ও মৃত্যুর নথিভুক্তির বিষয়টি নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কাছেই গত জুলাই মাসে মালদহ থেকে প্রথম অভিযোগ আসে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, জুলাইয়ে বেশ কয়েক জন অভিভাবক কয়েকটি জেলার সরকারি হাসপাতালে শিশুর জন্মের শংসাপত্রের কিছু ভুল সংশোধন করতে যান। তখন দেখা যায়, শংসাপত্র সরকারি হাসপাতালের হলেও, সেখানে ওই শিশুদের জন্ম হয়নি! প্রসঙ্গত, রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে মায়ের ছুটির সময়ে তাঁকে জননী সুরক্ষা যোজনার কিছু টাকা ও শিশুর জন্মের শংসাপত্র হাতে দিয়ে বাড়ি পাঠানোই নিয়ম। হাসপাতালই এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পোর্টালে শিশুর জন্ম নথিভুক্ত করে। পাশাপাশি আশাকর্মীরাও এমন কিছু শিশুর খবর আনেন, যেখানে অভিভাবকেরা এলাকায় নতুন এলেও তাঁদের সন্তানের জন্মের শংসাপত্র রয়েছে ওই এলাকার সরকারি হাসপাতালের! সেই খবর যায় স্বাস্থ্য দফতরে স্টেট বুরো অব হেলথ ইন্টেলিজেন্স-এ।