বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
তথ্যের অধিকার আইনে (আরটিআই) রাজ্য সরকারের ক্লাবকে অনুদান এবং আমফানের ক্ষতিপূরণ বণ্টন সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিলেন। নির্ধারিত ৩০ দিনের বেশি পার হয়ে গেলেও জবাব আসেনি। এ বার ওই বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ‘বৃহত্তর লড়াই’য়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অভিযোগ, দুই ক্ষেত্রেই সরকারি টাকা নয়ছয় হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দুই দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও জাভেদ খান অবশ্য বিরোধী নেতার অভিযোগ কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
রাজ্য সরকার ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কত ক্লাবকে অনুদান দিয়েছে, ক্লাবগুলির অডিট রিপোর্ট বা অনুদানের টাকা কাজে লাগানোর শংসাপত্র আছে কি না, সেই সব তথ্য জানতে চেয়ে রাজ্যের যুব কল্যাণ ও ক্রীড়া দফতরের সচিব সুব্রত বিশ্বাসের কাছে আবেদন করেছিলেন শুভেন্দু। একই ভাবে ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত কত জনকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে, তাদের ঠিকানা কী— এই সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছিল বিপর্যয় মোকবিলা ও অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের সচিব দুষ্যন্ত নারিয়ালার কাছে। বিরোধী দলনেতা সোমবার বলেন, ‘‘এক জন নাগরিক হিসেবে তথ্যের অধিকার আইনে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এই রাজ্য সরকারের এমন অবস্থা, তারা তথ্যের অধিকার আইনেও জবাব দেয় না! এর পরে যে পথে যেতে হয়, যাব এবং টাকা নষ্টের প্রমাণ দেব।’’
শুভেন্দুর অভিযোগ, রাজ্য সরকার যাদের অনুদান দিয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েক হাজার ক্লাব ‘ভুয়ো’। তাঁর বক্তব্য, আমফানের ক্ষয়ক্ষতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমে এক হাজার কোটি এবং পরে দফায় দফায় ২৭০০ কোটি টাকা দিয়েছে। ঘর ভাঙা, ফসল নষ্ট, গবাদি পশুর মৃত্যু— এই রকম নানা ক্ষতির খাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে আমফান-প্রভাবিত জেলাগুলিতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে অন্য লোকের হাতে টাকা চলে গিয়েছে বলে বিরোধী দলনেতার অভিযোগ। তাঁর আরও দাবি, রাজ্য সরকার ‘লক্ষ্ণীর ভাণ্ডারে’র টাকার ব্যবস্থা করতে না পেরে আইসিডিএস প্রকল্প থেকে টাকা নিচ্ছে, আবার আইসিডিএসের টাকা মেটাতে অন্য তহবিল থেকে অর্থ নেওয়া হচ্ছে। এই ভাবে এক তহবিলের টাকা অন্যত্র কাজে লাগিয়ে আর্থিক বিশৃঙ্খলা চালানো হচ্ছে।
ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ অবশ্য বলেছেন, ‘‘আরটিআইয়ের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব তো মন্ত্রীর নয়। রাজ্য সরকার নিশ্চয়ই যা করণীয়, তা করবে। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমি খোঁজ নিয়ে বলতে পারব।’’ আর শুভেন্দুর পাল্টা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ বলেছেন, ‘‘আমফান নিয়ে ক্ষতিপূরণের আবেদন ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকার। কেন্দ্রীয় সরকার সম্ভবত ২৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে। আমফানের ক্ষতিপূরণ এবং সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে এক লক্ষ কোটি টাকা চেয়েছিল। কিন্তু বিরোধী দলনেতা যা বলছেন, তা সর্বৈব মিথ্যা!’’
তাঁরা বিরোধীদের উপরে ‘প্রতিহিংসা’ দেখাতে যাননি বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পাল্টা হিসেবে শুভেন্দু এ দিন তথ্য দিয়েছেন, বিধানসভা ভোটের ফল বেরোনোর পর ২০২১ সালের ৫ মে থেকে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ২১টি এবং তাঁর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ৮টি এফআইআর করে মামলা দায়ের হয়েছে। বিরোধী দলনেতার দাবি, ‘‘রাজ্যের যখন ভয়ঙ্কর আর্থিক অবস্থা, তখন বিরোধীদের এই সব মামলায় আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, কপিল সিব্বল, সিদ্ধার্থ সিংহদের ২০ কোটি টাকা বেতন দেওয়া হয়েছে। জনকল্যাণের টাকা খরচ হচ্ছে বিরোধীদের জব্দ করার জন্য! প্রতিহিংসার এর চেয়ে বড় উদাহরণ হয়?’’ তৃণমূলের নেতা তাপস রায় অবশ্য বলেন, ‘‘অভিযোগ করা ওঁর অভ্যাস গিয়েছে! এ সব অভিযোগের সারবত্তা আছে?’’