প্রতীকী ছবি।
দীর্ঘস্থায়ী অতিমারির ধাক্কায় বিপর্যস্ত পর্যটন শিল্পও। ২০২০-২১ এবং চলতি আর্থিক বছরে (২০২১-২২) এখনও পর্যন্ত রাজ্যের পর্যটন শিল্পে সম্মিলিত ভাবে কত লোকসান হয়েছে, সেই হিসেব কষা কার্যত অসম্ভব বলে জানাচ্ছে পর্যটন সংস্থাগুলি। বড় সংস্থাগুলি এই ধাক্কা কোনও মতে সামলে উঠতে পারলেও ছোট বা মাঝারি সংস্থাগুলির নাজেহাল অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে সংস্থাগুলির পুনরুজ্জীবনে ‘পর্যটন সহায়তা প্রকল্প’-এ ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন’ বা সহজ মূলধনি ঋণের সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। এই প্রকল্পে মন্ত্রিসভার অনুমোদন মিলেছে। প্রকল্প চালু থাকবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
পর্যটন সহায়তা প্রকল্পের আওতায় দৈনন্দিন ব্যবসা চালাতে স্বল্পমেয়াদি মূলধনি ঋণের ব্যবস্থা হবে। প্রথম বছরের সুদের ৫০% রাজ্য সরকার মেটাবে, বাকি দায়িত্ব সংস্থার। ৫০ হাজার থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ মিলবে। সর্বাধিক এক হাজার সংস্থা এই সুবিধা নিতে পারবে। সব মিলিয়ে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ধরা রয়েছে ১০০ কোটি টাকা। ট্রেড লাইসেন্সধারী ছোট-মাঝারি-বড় পর্যটন সংস্থাগুলি এই ঋণের সুবিধা পাবে। পর্যটন দফতরের পোর্টালে জমা পড়া আবেদনপত্র জেলাশাসকদের মাধ্যমে নোডাল ব্যাঙ্কের কাছে পাঠানো হবে। ব্যাঙ্ক যাচাই করে বৈধ আবেদনকারীদের ঋণ দেবে।
সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যের জিডিপি-তে ১১ শতাংশের বেশি অবদান পর্যটন ক্ষেত্রের। কিন্তু চলতি পরিস্থিতিতে পর্যটন থমকে গিয়েছে। এই অবস্থায় বেসরকারি ছোট-মাঝারি পর্যটন সংস্থাগুলি বন্ধ হয়ে গেলে পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতির চাকা গড়াতে কেটে যাবে বহু বছর। বেকারত্বের হারও বাড়বে।
পর্যটন দফতরের বক্তব্য, কোনও টুর অপারেটর ঋণ নিতে গেলে ব্যাঙ্কগুলি অনেক সময়েই গড়িমসি করে। তাই ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে এই প্রকল্প নিয়ে বৈঠক করেছেন কর্তারা। এক কর্তার কথায়, ‘‘এখন ব্যবসা চালু রাখাই সংস্থাগুলির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। মূলধনি ঋণ সাধারণত এক বছরের জন্যই হয়। সুদের ৫০% ভার রাজ্য বহন করলে সংস্থাগুলির বোঝা হালকা হবে।” পর্যটন মহলের খবর, দেশে পর্যটন-সহায়তায় ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র। পর্যটন মন্ত্রকের অনুমোদিত প্রায় ৯৫০ সংস্থা এর সুবিধা পেতে পারে। রাজ্যের পদক্ষেপে আরও উপভোক্তা সুবিধা পাবেন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
পর্যটন মহলের মতে, কোভিডের কারণে অতীতে কেন্দ্র যখন শিল্প সংস্থাগুলিকে ঋণ নিতে উৎসাহ দিচ্ছিল, তখন বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, বাজার চাঙ্গা হলে এই ব্যবস্থা চালু করলে আরও সুবিধা হত। প্রশ্ন ওঠে, বাজার চাঙ্গা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে গিয়ে ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলি যদি বন্ধ হয়ে যায়? তাই তাঁদের কার্যকর মূলধন জোগানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব টুর অপারেটর এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ডোমেস্টিক টুর অপারেটর্স অব ইন্ডিয়ার রাজ্য-চেয়ারম্যান দেবজিৎ দত্ত বলেন, “চাকুরিরতদের অন্তত ১০% পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত। পর্যটন শিল্পের পুনরুজ্জীবনে কিছুটা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে হাতে-গোনা রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গ তাদের অন্যতম।”