মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিল নবান্ন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ দফতরের তরফে এই বিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকারি কর্মচারী, সরকার অনুমোদিত শিক্ষাঙ্গনের কর্মচারী, স্বশাসিত সংস্থা, সরকার অধীনস্থ পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত কর্মী, পুরনিগম, পুরসভা, স্থানীয় বোর্ড এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের পেনশন প্রাপকরা এই সুবিধা পাবেন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাজ্যপাল সব দিক খতিয়ে দেখে ডিএ দেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ২১ ডিসেম্বর পার্ক স্ট্রিটে বড়দিনের উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে সরকারি কর্মচারীদের জন্য এই চার শতাংশ ডিএ-র ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে ওই দিনই কলকাতা হাই কোর্ট সংগ্রামী যৌথ লঞ্চের সদস্যদের ডিএর দাবিতে নবান্নের সামনে বিক্ষোভে বসার অনুমতি দিয়েছিল।
এত দিন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ৬ শতাংশ হারে ডিএ পেতেন। বৃহস্পতিবারের ঘোষণার পর থেকে তাঁরা পাবেন ১০ শতাংশ হারে। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই ঘোষণা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছিলেন মমতা। সেই মতোই নতুন বছরের তৃতীয় দিনে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল। ডিএ বৃদ্ধি করায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতার ফারাক কমে হল ৩৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা বর্তমানে ৪৬ শতাংশ ডিএ পান। মমতা ঘোষণার সময়ে এ বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্য ফারাক বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে ডিএ বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে তা নয়। রাজ্যে ডিএ ঐচ্ছিক।’’ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ফলে সরকারের ২,৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানানো হয়েছে। এতে উপকৃত হবেন রাজ্যের ১৪ লক্ষ সরকারি কর্মী। প্রসঙ্গত, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ৩ শতাংশ ডিএ-র ঘোষণা করেছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
ডিএ বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে কো-অর্ডিনেশন কমিটির তরফে বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা যেখানে ৪০ শতাংশ ডিএ-র দাবি করছি, সেখানে চার শতাংশ ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী কি আমাদের উপর দয়া করছেন? বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও আমরা আমাদের দাবি থেকে সরছি না, সরব না। এটা যেন রাজ্য সরকার মনে রাখে।’’ সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ ডিএ-র দাবিতে আমাদের আন্দোলন যে ভাবে চলছিল সে ভাবেই চলবে। আগামী ১৯ জানুয়ারি আমরা বড় কর্মসূচির ডাক দিয়েছি ওই দিন আবারও সরকারকে আমরা আমাদের দাবির কথা স্মরণ করিয়ে দেব। তা ছাড়া এই সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে দৈনিক ২২ টাকা এবং মাসে ৬৬৬ টা টাকা বেতন বৃদ্ধি হয়েছে দৈনিক মজুরি প্রাপ্ত শ্রমিকদের। আমাদের দাবি, এর থেকে অনেক বেশি দিতে হবে। সঙ্গে শূন্যপদ পূরণ নিয়েও আমাদের দাবি থাকবে।’’ বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘এই সামান্য ১০ শতাংশ ডিএ নিয়ে আমাদের রাজ্যের শিক্ষক ও কর্মচারীরা খুশি নয়। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি, সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য সমস্ত চুক্তিভিত্তিক কর্মী, পার্শ্বশিক্ষক ও সমগ্র শিক্ষার কর্মী-সহ তাদেরও সম্মানজনক বেতন কাঠামো দেওয়া হোক।’’ তবে তৃণমূল সমর্থিত পশ্চিমবঙ্গ কর্মচারী ফেডারেশন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক প্রতাপ নায়েক বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথা ও কাজে যে মিল রয়েছে তা এই বিজ্ঞপ্তি প্রমাণ করে দিল। বিরোধী সংগঠনগুলি কী বলছে আমরা জানি না, বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর আমরা সরকারি কর্মচারীরা খুশি। তাই তাঁকে আমরা অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।’’