কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়েছে এনটিপিসি।
জল, কয়লা, পরিবহণ ব্যবস্থা-সহ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত প্রায় হয়ে গিয়েছিল। তার পরেও প্রকল্পের ক্যাম্প অফিসের বহর ও তৎপরতা কয়েক বছর ধরে কমছিল। বোঝা যাচ্ছিল, কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়েছে এনটিপিসি। এ বার প্রস্তাবিত ওই প্রকল্পের জমি রাজ্যকে ফেরানোর বিষয়েও তোড়জোড় শুরু হল। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি নবান্নে এসে এনটিপিসি কর্তারা বৈঠক করেন। সেখানে জমি ফেরত নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত ভাবে সম্মত হয়েছে রাজ্য। তবে প্রকল্পে বিনিয়োগ করা টাকা সুদ-সহ ফেরত চেয়েছে এনটিপিসি। সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত রাজ্য প্রশাসনের তরফে এখনও এনটিপিসি-কে জানানো হয়নি।
এনটিপিসি-র এক কর্তার দাবি, “সুদ-সহ বিনিয়োগের টাকা ফেরত পেলেই জমি রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। কাটোয়ায় প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এনটিপিসি কত টাকা বিনিয়োগ করেছে, তা রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে। এনটিপিসি রেলকে যে টাকা দিয়েছে, তা মেটানো নিয়ে আপত্তি রয়েছে রাজ্য সরকারের।’’ এনটিপিসি-র একটি সূত্রের দাবি, রাজ্য সরকারের কাছে ৩৭২ কোটি টাকা বিনিয়োগের হিসাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জমির দাম রয়েছে ৯০ কোটি, বর্ধমান-কাটোয়া ব্রডগেজ রেলপথের জন্য রয়েছে ১১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, আবাসন কেনার খরচ ও কর্মী-আধিকারিকদের বেতন ধরা রয়েছে।
বৈঠকের কথা মেনে নিয়ে রাজ্য প্রশাসন সূত্রের দাবি, সুদ-সহ বিনিয়োগের টাকা ফেরত চেয়েছে এনটিপিসি। এখনও রাজ্য সরকার সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি। কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য প্রথমে ৫৮৭ একর জমি তুলে দিয়েছিল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। তা ফেরানোর বিষয়েই কথা হয়েছে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্য সরকারের নীতি মেনে এনটিপিসি চাষিদের কাছে সরাসরি প্রায় একশো একর জমি কেনে। সেই জমি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
২০০৫ সালের ৫ অগস্ট কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজ্য সরকার। ২০০৬-এর ৬ ফেব্রুয়ারি সেটির শিলান্যাস করেন রাজ্যের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন ও বিদ্যুৎমন্ত্রী মৃণাল সেন। রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমকে (পিডিসিএল) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ার কোশীগ্রাম, শ্রীখণ্ড, দেবকুণ্ডু, চুড়পুনি মৌজায় ৮০০ একর জমিতে ৮০০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট গড়ে তোলার প্রস্তাব ছিল। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর জেলা প্রশাসন পিডিসিএল-কে ৫৫৬ একর জমি তুলে দেয়। তার আগে কাটোয়ার শ্রীখণ্ডে প্রশাসনের দেওয়া ৩১ একর জায়গায় আবাসন তৈরি করেছিল পিডিসিএল। পরে প্রকল্প রূপায়ণের ভার এনটিপিসি-কে হস্তান্তর করা হয়। সে বছরই রাজ্য সরকারের সঙ্গে এনটিপিসি-র মৌ চুক্তি হয়। জমির সমস্যা মেটাতে নিজেদের হাতে থাকা একশো একর জমিও এনটিপিসি-কে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। জমি নেওয়ার পরে প্রায় দেড় দশক কাটতে চললেও, বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠছে না কেন, সে প্রশ্ন তুলেছিলেন জমিদাতারা। কেন্দ্র গড়তে এনটিপিসি-র তৎপরতা কমে যাওয়ায় সে প্রশ্ন আরও জোরালো হয়। এনিপিসি সূত্রের খবর, প্রকল্প গড়তে প্রয়োজনীয় আরও প্রায় ৫০ একর জায়গা কেনায় জটিলতা হচ্ছিল। এ ছাড়া, প্রস্তাবিত কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের চাহিদা নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়। সে কারণেই প্রকল্পটি নিয়ে আগ্রহ কমছিল। কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন, কেন্দ্রের অধীনস্থ এনটিপিসি-র হাতে থাকা জমি বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তাই ওই জমি ফেরত নিয়ে রাজ্য সরকার নিজেই শিল্প গড়ুক। এই চিঠি পাওয়ার পরে নবান্ন থেকে পটনায় এনটিপিসি-র আঞ্চলিক দফতরে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তার প্রেক্ষিতেই কয়েক মাস আগে নবান্নে বৈঠক করে এনটিপিসি সুদ-সহ বিনিয়োগের টাকা ফেরতের দাবি করেছে বলে সূত্রের খবর।
পরিস্থিতি এখন কোন দিকে গড়ায়, সে দিকেই নজর এলাকাবাসী থেকে শিল্পমহলের।