তৃণমূল সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে পাঁচ মাস অতিক্রান্ত। কী কী নতুন পদক্ষেপ করা হচ্ছে? রাজ্যের কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতির কী ইঙ্গিত মিলছে?
farm

five months after third term of TMC: কৃষি ও খাদ্যে কেন্দ্রের সঙ্গে সমানে টক্কর

তৃণমূল সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরে পাঁচ মাস অতিক্রান্ত। কী কী নতুন পদক্ষেপ করা হচ্ছে? রাজ্যের কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতির কী ইঙ্গিত মিলছে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৭:২৩
Share:

‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির মাধ্যমে বাকি কৃষকদেরও প্রকল্পের অধীনে আনতে চাইছে রাজ্য। ফাইল চিত্র।

রাজনৈতিক আকচা-আকচি তুঙ্গে। তারই সূত্রে কৃষি, খাদ্য থেকে শুরু করে নানান কল্যাণ প্রকল্পের অস্ত্রে প্রভাব বিস্তারের খেলাতেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আর বাংলার তৃণমূল সরকারের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা।

Advertisement

সেই টানাপড়েনে কখনও কেন্দ্র আগে তো কখনও পশ্চিমবঙ্গ। বিশেষত কৃষি ও খাদ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যের চড়া টক্কর রাজনীতির পারদকে স্থির থাকতে দেয়নি অতীতে। ফলে কৃষক ও রেশন স্বাভাবিক ভাবেই চলে এসেছিল তৃণমূল সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায়। গত বিধানসভা নির্বাচনের লড়াই এই দু’টি ক্ষেত্রকে সেই তালিকায় এগিয়ে দিয়েছে আরও কয়েক কদম। তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরে তাই শত আর্থিক সমস্যার মধ্যেও কৃষি আর খাদ্যের প্রতিশ্রুতি পূরণকে অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে সরকারকে।

কেন্দ্রের পিএম কিসান এবং রাজ্যের কৃষকবন্ধু প্রকল্প প্রায় কাছাকাছি সময়ে শুরু হয়েছিল। রাজনৈতিক টক্করে এই দু’টি প্রকল্পের জুড়ি মেলা ভার। কৃষক-কল্যাণে বাংলা কেন কেন্দ্রের প্রকল্প গ্রহণ করেনি, তা নিয়ে চাপান-উতোর চরমে উঠেছিল। গত বিধানসভা ভোটের প্রচারে এই প্রকল্পের পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের জন্য পৃথক প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পিছিয়ে থাকেনি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও। কেন্দ্রীয় প্রকল্প গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের কৃষকবন্ধুতে আর্থিক সুবিধার পরিমাণ কেন্দ্রের তুলনায় অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। ক্ষমতায় ফিরে তাই বার্ষিক আর্থিক সুবিধার পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার এবং ন্যূনতম বার্ষিক সুবিধা দু’হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করা হয়। এর বাইরে কোনও কৃষকের অকালমৃত্যুতে তাঁর পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। আগের প্রকল্পের আওতায় থাকা অন্তত ৬৩ লক্ষ কৃষককে বর্ধিত হারে সুবিধা দেওয়ার সঙ্গে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির মাধ্যমে বাকি কৃষকদেরও প্রকল্পের অধীনে আনতে চাইছে রাজ্য। তাদের লক্ষ্য, বঙ্গের ৬৮ লক্ষ কৃষককে এই সুবিধা দেওয়া।

Advertisement

গত বছর লকডাউনের সময় থেকে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই নিখরচায় রেশন চালু করেছিল। নিখরচার রেশনের সময়সীমা কেন্দ্র যত বাড়িয়েছে, রাজ্যও তার মেয়াদ বাড়িয়েছে পাল্লা দিয়ে। কার্যত টেক্কা দিয়েই এখনও পর্যন্ত নিখরচার রেশন চালু রেখেছে রাজ্য। বিরোধী শিবিরের অনেকেরই বক্তব্য, গত বছর রেশনের বিলিবণ্টনকে ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল রাজ্যে। আম-উপভোক্তাদের রোষের অভিঘাত বুঝেই রেশন বিলির খোলনলচে বদলে ফেলতে হয় রাজ্য সরকারকে। তাদের যুক্তি, দীর্ঘ লকডাউনের ধাক্কায় বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিকও। এই অবস্থায় রাজ্য সরকার খাদ্য সংস্থানের দায়িত্ব না-নিলে অনেক পরিবারকেই আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হত। প্রকৃত উপভোক্তার রেশন যাতে বেহাত না-হয়, তা নিশ্চিত করতে এসএমএস-নির্ভর রেশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এক দেশ এক রেশন কার্ড প্রকল্পের আওতায় রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগের কাজও চলছে দ্রুত।

সেপ্টেম্বরে পরীক্ষামূলক ভাবে দুয়ারে রেশন বিলি শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যে। কাজটা আপাতত রেশন ডিলারদের মাধ্যমেই করতে চাইছে সরকার। এর জন্য ডিলারদের কমিশন এবং গাড়ি কেনার ভর্তুকির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষক শিবিরের অনেকের বক্তব্য, অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়ে এই কাজ করানো সম্ভব নয়। সরকারের নিজের পক্ষেও সেটা কার্যত অসম্ভব।

পতিত জমিকে চাষযোগ্য করে তুলতে দ্বিতীয় তৃণমূল সরকারের আমলে মাটির সৃষ্টি প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। চলতি বছরে তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে সেই প্রকল্পে আরও জোর দিয়েছে রাজ্য। বিকল্প কর্মসংস্থান করতে এবং আয়ের উৎস হিসেবে তুলে ধরতে প্রকল্পটি সহায়ক হবে বলে মনে করছে রাজ্য প্রশাসন।

তবে প্রশ্ন যে নেই, তা নয়। যেমন, বিরোধী শিবির থেকে বার বার দাবি করা হয়েছে, রাজ্য সরকার রাজনীতির ‘গোঁ’ ধরে বসে না থাকলে, অনেক আগেই কৃষক-বন্ধু প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারতেন পশ্চিমবঙ্গের চাষিরা। রাজ্যের পাল্টা দাবি, নবান্ন থেকে কেন্দ্রকে চাষিদের তথ্য দেওয়ার পরেই বা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন ক’জন? মোদী সরকারের বক্তব্য, ঠিক তথ্য পেলে এবং ‘যোগ্য’ হলে, টাকা পাওয়া আটকাবে না কারও। অর্থাৎ, কে কৃষকের ‘প্রকৃত বন্ধু’, রাজনীতির সেই টক্কর এখনও চলছে।

অনেকটা একই রকম অভিযোগ এক দেশ-এক রেশন কার্ড ব্যবস্থা নিয়েও। বিরোধী শিবিরের একাংশের বক্তব্য, বাস্তব পরিস্থিতি মেনে বহু আগেই সারা দেশে এই ব্যবস্থা চালু করার পক্ষে সওয়াল করে এসেছে মোদী সরকার। কিন্তু তখন দীর্ঘদিন এ নিয়ে বেঁকে বসেছিল রাজ্যই। ফলে এই প্রকল্প রূপায়ণে ‘অকারণ বিলম্বের’ দায় এড়াতে পারে না তারা। উল্টো দিকে রাজ্যের প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, তারা কখনও মানুষের সুবিধা পাওয়ার বিরোধী নয়। ‘দুয়ারে রেশনের’ প্রতিশ্রুতিও সেই কারণে। কিন্তু প্রকল্পে অকারণ জটিলতা এবং তাকে নিয়ে শুধু নিজেদের পাতে ঝোল টেনে কেন্দ্রের একতরফা সাফল্য প্রচারের তারা বিরোধী।

সুতরাং সব মিলিয়ে, রাজনীতির লড়াইয়ের আঁচ এখনও এতে গনগনে। কিন্তু তা পেরিয়ে চাষিদের অ্যাকাউন্টে টাকা এবং ‘দুয়ারে রেশন’ নিয়মিত ও নির্বিঘ্নে পৌঁছচ্ছে কি না, তা নিয়েই আগ্রহ আম-উপভোক্তাদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement