নিজস্ব চিত্র।
স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এ নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে অবাক করার মতো ‘তথ্য’ উঠে এল সিবিআইয়ের হাতে। চাকরির জন্য আবেদন না করেও অনেকে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। সিবিআই সূত্রে খবর, তদন্তে নেমে মামলাকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বহু ‘চাঞ্চল্যকর তথ্য’ উঠে এসেছে। এমনকি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের অনুসন্ধান কমিটির দেখানো দুর্নীতির বাইরেও নতুন নতুন তথ্য সামনে এসেছে।
সূত্রের খবর, মামলাকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং নিজেদের তদন্তে সিবিআই জানতে পেরেছে, এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ না নিয়েও অনেকে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। অর্থাৎ চাকরির আবেদন (ফর্ম ফিলআপ) না করা সত্ত্বেও চাকরির সুপারিশপত্র দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এসএসসি-র বিরুদ্ধে। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ওই বেআইনি নিয়োগ প্রাপ্যকদের সঠিক নথি ছাড়া স্কুলে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব খাটানো হয়েছে। সূত্রের আরও খবর, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা মামলাকারীদের কাছ থেকে নথি, প্রমাণ-সহ জানতে পেরেছে, তৃতীয় শ্রেণিতে বাগ কমিটি ৩৮১টি বেআইনি নিয়োগের কথা বললেও, সংখ্যাটা আরও বেশি।
এই মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের মতে, গত কয়েক দিন ধরে এসএসসি-র অফিস আচার্য সদনে তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। তাতে বেশ কিছু নথি হাতে আসে। অন্য দিকে, সোমবার থেকেই মামলাকারীদের কাছ থেকে নথি হাতে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে তারা। ফৌজদারি আইনের ৯১ ধারা অনুযায়ী মামলাকারীদের এই নথি বা তথ্যাদি এসএসসি দুর্নীতির রহস্যভেদ করতে অন্যতম হাতিয়ার হবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি এবং সহকারী শিক্ষক নিয়োগ মিলিয়ে মোট আটটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি বাগ কমিটির সুপারিশ গ্ৰুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি-র রহস্যভেদে সিবিআইকে সাহায্য করেছে। ফলে আদালত যে নথির উপর দাঁড়িয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, সেই নথিসমূহ সিবিআই নিজেদের হেফাজতে নিতে শুরু করেছে। এর আগে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, বর্তমান শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, এসএসসি উপদেষ্টা, নজরদারি কমিটির পাঁচ সদস্য, এসএসসি-র তৎকালীন প্রোগ্রামিং অফিসার— প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। সোমবার এই মামলায় নিজাম প্যালেসে সিবিআইকে দুর্নীতির নথি দিয়ে আসেন গ্ৰুপ-সি এবং নবম-দশমের মামলকারীরা।
পরীক্ষায় পাশ করেননি, মেধাতালিকায় নাম নেই, এর আগে এমন ব্যক্তিদের চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ বার আবেদন না করা সত্ত্বেও চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠল। প্রসঙ্গত, দু’মাস আগে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ের উপর একটি অডিয়ো ক্লিপ আদালতে শোনানো হয় (আনন্দবাজার অনলাইন ওই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। আদালতও সেটি রেকর্ড হিসাবে রাখেনি)। সেখানে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি ‘বিক্রি’র কথা শোনা যায়। এক পুরুষ কণ্ঠকে ওই ক্লিপে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা এত টাকা নেব না। আমরা মাত্র এক লাখ টাকা পাব। বাকি টাকা নেবে এসএসসি।’’ এমনকি, ওই কণ্ঠকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘‘পরীক্ষা না দিলে বা উত্তরপত্র খালি জমা দিলে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা রয়েছে।’’