West Bengal SSC Scam

SSC Scam: নাম নেই! ফাঁস হতেই চাকরি গেল ৫ জনের, এসএসসি-র নিয়োগে অনিয়ম ফাঁস হল কী ভাবে

বেনিয়ম হয়েছে ভৌত বিজ্ঞানে পাঁচ জনের ক্ষেত্রেও। আরটিআই করে তথ্য পেয়ে আন্দোলনকারীদের একাংশ জানতে পেরেছেন, এ বার আর পুকুর চুরি নয়, নদী চুরি!

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২২ ০৬:০৬
Share:

গান্ধী মূর্তির সামনে অনশন চাকরিপ্রার্থীদের। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

কথা ছিল, পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেই নাম উঠবে মেধা-তালিকায়। মিলবে চাকরি। কিন্তু অভিযোগ, তা হয়নি। চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, মাসের পর পর মাস আন্দোলন করতে-করতে তাঁরা জোগাড় করে ফেলেছেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) অনিয়মের নানা প্রমাণ। সেই প্রমাণের উপরে ভিত্তি করে আদালতে মামলা হচ্ছে। খারিজ হচ্ছে অনিয়মের চাকরি। আর সেই সূত্র ধরেই প্রশ্ন উঠেছে, এসএসসির নিয়োগে অনিয়মের জাল কতটা বিস্তৃত।

Advertisement

যেমন, এসএসসি-র নবম, দশমের গণিতের চাকরিপ্রার্থী প্রকাশ ঘোষের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চাকরি গিয়েছে এক চাকরিপ্রাপ্তের। প্রকাশ জানান, গণিতের ওবিসি বি (মেল, ফিমেল) ক্যাটেগরিতে নবম, দশমের ওয়েটিং লিস্টে নাম রয়েছে ৩৭০ জন চাকরিপ্রার্থীর। অষ্টম কাউন্সেলিং-এ ওয়েটিং লিস্ট ধরে ডাক পেয়েছিলেন ১৯১ জন। প্রকাশের কথায়, “ওই ১৯১ জন চাকরি পাওয়ার পরেও যদি শূন্যপদ থেকে থাকে, তা হলে পর্যায়ক্রমে ডাক পাওয়ার কথা। কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, ২৭৫ র‌্যাঙ্কের এক জনের নিয়োগ হয়েছে মুর্শিদাবাদের সলুয়া ডাঙা হাইস্কুলে। অথচ আমার র‌্যাঙ্ক ২৫৯! তা হলে আমি চাকরি না পেয়ে ২৭৫ র‌্যাঙ্ককে কেন চাকরি দেওয়া হল?’’

প্রকাশ জানান, তাঁরা তখন ওই প্রার্থীর চাকরির নিয়োগের নথি জোগাড় করতে শুরু করলেন। সংশ্লিষ্ট স্কুলের ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট চাকরিপ্রাপকের নাম যাচাই করলেন, তার পরে প্রধান শিক্ষকের কাছে তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত আইনে (আরটিআই আইন, ২০০৫) আবেদন করে জানতে চাইলেন, কবে থেকে ওই প্রার্থী চাকরি করছেন। জানা যায়, ওই প্রার্থী ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই স্কুলে চাকরি করছেন। আরটিআইয়ের মাধ্যমেই তাঁরা জানতে পারেন, ওই প্রার্থীর রেকমেন্ডেশন লেটার এবং অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারের মেমো নম্বর।

Advertisement

এর পরে হাইকোর্টে মামলা করেন প্রকাশ। সেই মামলার নম্বর ছিল wpa/ 184687/2021। প্রকাশ বলেন, “উত্তরে এসএসসি কোর্টকে জানায়, ভুল করে নিয়োগ হয়ে গিয়েছিল! তখন এজলাসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, একটি ইঁদুর পচেনি, হাজার-হাজার ইঁদুর পচেছে নিশ্চয়। এর পরে ১৭ মার্চ এসএসসি নোটিস দিয়ে ওই নিয়োগ বাতিল করে।’’

প্রকাশ একা নন, গান্ধী মুর্তির পাদদেশে অবস্থানরত এসএসসির নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, অনেক চাকরিপ্রার্থীই এই ভাবে আরটিআই করে নথি বার করে আদালতে প্রমাণ দিয়েছেন এবং তার সূত্র ধরে বেনিয়মের চাকরি গিয়েছে।

যেমন দেখা যায়, বেনিয়ম হয়েছে ভৌত বিজ্ঞানে পাঁচ জনের ক্ষেত্রেও। আরটিআই করে তথ্য পেয়ে আন্দোলনকারীদের একাংশ জানতে পেরেছেন, এ বার আর পুকুর চুরি নয়, নদী চুরি! এর আগে ২৭৫ র‌্যাঙ্কের চাকরিপ্রার্থীর তবু মেধা তালিকায় ওয়েটিং লিস্টে নাম ছিল, কিন্তু ভৌত বিজ্ঞানের ওই পাঁচ শিক্ষকের নাম মেধা তালিকায় কোথাও নেই বলে অভিযোগ। অথচ তাঁরা বিভিন্ন স্কুলে ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেছেন।

প্রার্থীরা জানান, মেধা তালিকায় দু’টি ভাগ থাকে। এমপ্যানেল্ড লিস্ট এবং ওয়েটিং লিস্ট। খুঁজে দেখা যায়, ওই পাঁচ প্রার্থীর নাম ওয়েটিং লিস্টে নেই, আবার এমপ্যানেল্ড লিস্টেও নেই। চাকরিপ্রার্থীরা আরটিআইয়ের আওতায় জানতে চান, ওই পাঁচ ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষকের রেকমেন্ডেশন লেটার ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারের নম্বর কত? সেগুলি জানার পরে ফের মামলা করেন মহম্মদ আব্দুল গনি আনসারি নামে এক চাকরিপ্রার্থী। আবদুল গনি জানান, ওই মামলার কেস নম্বর ছিল WPA-13701/2021। মামলার ভিত্তিতে কমিশন আদালতে জানায়, ভুল করে হয়ে গিয়েছে। ওই পাঁচ শিক্ষকের চাকরি যায়।

আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন করেছিলেন, এ রকম পচা ইঁদুর কতগুলি আছে? তাঁদেরও প্রশ্ন একই। সেই সঙ্গে তাঁরা জানতে চান, সেই পচা ইঁদুর তাঁদের খুঁজে বার করতে হবে কেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement