শুক্রবার সকালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে পৌঁছে তল্লাশি অভিযান শুরু করেন ইডি অফিসাররা। এসএসসি ‘দুর্নীতি’-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই দিনেই আরও ১৪ জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। তালিকায় ছিলেন ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের অভিজাত আবাসন।
ইডির একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যাবেলা তাদের সাত জনের একটি দল সরকারি গাড়িতে চেপে পৌঁছে যায় অর্পিতার টালিগঞ্জের অভিজাত আবাসনে। দলে ছিলেন দু’জন মহিলা আধিকারিক। বিশেষ সূত্রে খবর পেয়েই আধিকারিকরা গিয়েছিলেন সেখানে।
ইডি সূত্রে খবর, গাড়ি থেকে নেমে ইডি আধিকারিকরা সোজা চলে যান অর্পিতার দোতলার ফ্ল্যাটে। সূত্রের খবর, ফ্ল্যাটে ছিল তিনটি ঘর। একটি ছিল বন্ধ। অন্যটিতে ছিলেন অর্পিতা। তাঁর ঘরে ঢুকে একটি ওয়ারড্রব চোখে পড়ে আধিকারিকদের।
সেই ওয়ারড্রব ছিল বন্ধ। সেটির দরজা খুলে দিতে বলেন ইডি আধিকারিকরা। ওয়ারড্রবের পাল্লা খুলতেই বেরিয়ে আসে দু’টি বস্তা। বস্তার ভিতর থেকেই মেলে বিপুল অর্থ। সবই ৫০০ আর ২,০০০ টাকার। শুক্রবার রাত ৮টা ১০ মিনিট নাগাদ টুইটারে সে কথা জানিয়েছিল ইডি।
এত টাকা এল কী ভাবে? ইডি আধিকারিকরা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, উদ্ধার হওয়া টাকার সঙ্গে এসএসসি দুর্নীতির যোগ থাকতে পারে। শুক্রবার রাতেই ব্যাঙ্ক থেকে আসেন আধিকারিকরা। আনানো হয় চারটি নোট গোনার যন্ত্র। ব্যাঙ্ক আধিকারিকরা সারা রাত ধরে গোনেন ওই নোট। অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে ১৮টি মোবাইল ফোন এবং গয়নাও উদ্ধার হয়।
ইডির আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী পুজোর সঙ্গে যুক্ত অর্পিতা। সেই পুজোর সঙ্গে যোগ রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। অর্পিতার বাড়িতে যখন ইডির হানা চলছে, তখন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর একের পর এক ছবি।
শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ গ্রেফতার করা হয় রাজ্যের মন্ত্রী পার্থকে। কয়েক ঘণ্টা পর সকালে আটক করা ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতাকে। এর পর জেরায় আরও সম্পত্তির হদিস মেলে।
ইডির তরফে জানানো হয়েছে, বেলঘরিয়ার রথতলার একটি অভিজাত আবাসনে দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে অর্পিতার। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেখানে মাস কয়েক আগেও নিয়মিত দেখা যেত অর্পিতাকে। দেওয়ানপাড়াতেও একটি বাড়ি রয়েছে অর্পিতার। সেখানে এখন তাঁর মা এবং অন্য আত্মীয়েরা থাকেন।
বেলঘরিয়ার রথতলার আবাসনের কয়েক জন বাসিন্দা দাবি করেছেন, মাঝেমধ্যেই সেখানে লাল বাতির গাড়ি চেপে কেউ কেউ আসতেন। তবে তাঁর অর্পিতার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন কি না, জানা যায়নি। আবাসিকদের দাবি, আবাসনের রেজিস্টার দেখলেই বোঝা যাবে কে বা কারা এসেছিলেন।
২৩ জুলাই, শনিবার সন্ধ্যাবেলা অর্পিতাকে গ্রেফতার করে ইডি। সেই প্রথম তাঁকে দেখা যায় টিভির পর্দায়। অভিজাত আবাসন থেকে বেরিয়ে আসছেন অর্পিতা। গায়ে লাল টিশার্ট। তার ওপর জড়ানো সাদা-কালো শ্রাগ।
রক্ষীদের এড়িয়েই চিৎকার করে অর্পিতা বলে ওঠেন, ‘‘আমি কোনও অন্যায় করিনি। বিজেপির চাল। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’
গ্রেফতার করে প্রথমে জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অর্পিতাকে। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা চলে। এর পর শনিবার রাতে নিয়ে যাওয়া হয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে। সেখানেই ফের শুরু হয় জেরা।
ইডি জানিয়েছে, অর্পিতার বাড়ি থেকে মিলেছে নগদ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা, ৭৯ লক্ষ টাকার গয়না, ১৮টি মোবাইল ফোন। এ ছাড়াও মিলেছে বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা। শনিবার বিকেলে ট্রাকে করে ট্র্যাঙ্ক এনে সে সব নোট নিয়ে গিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
২৪ জুলাই, রবিবার সকালে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করা হয় অর্পিতাকে। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ইডি তাঁকে নিয়ে যান কোর্টে। ফের এক ঝলক দেখা যায় অর্পিতাকে। তখনও তাঁর পরনে সেই একই পোশাক। লাল টিশার্ট। তার ওপর জড়ানো সাদা-কালো শ্রাগ।
অর্পিতাকে এক দিনের জন্য ইডির হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। রবিবার রাতে ব্যাঙ্কশাল আদালত থেকে আবার সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সে সময়ই ঘটে বিপত্তি। ইডির কনভয়ে ঢুকে পড়ে একটি অন্য গাড়ি। কনভয়ের একেবারে সামনের গাড়িতেই বসেছিলেন অর্পিতা। সংঘর্ষ এড়াতে ব্রেক কষে গাড়িটি। চোট পান ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা।
সোমবার সকালে ফের সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অর্পিতাকে। তখনও তাঁর গায়ে সেই শনিবার থেকে পরা পোশাক। লাল টিশার্ট আর সাদা-কালো শ্রাগ।
জোকার ইএসআই হাসপাতালে কড়া নিরাপত্তা। মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেখানে স্বাস্থ্যপরীক্ষার পরেই ফের অর্পিতাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ব্যাঙ্কশাল আদালতে।