প্রতীকী ছবি।
ছ’মাস আগে-পরের দু’টি তালিকা। আর তাতেই বিস্তর ফারাক! প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকার শূন্য পদের তালিকায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, গত স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) জানুয়ারিতে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকার শূন্য পদের যে-তালিকা প্রকাশ করেছিল আর সম্প্রতি তারা ওই শূন্য পদের যে-চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে, সেই দু’টির মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে গরমিল রয়েছে।
কোথাও একই স্কুল কোড বা ভ্যাকেন্সি কোডে দু’টি তালিকায় দু’টি ভিন্ন স্কুলের নাম, কোথাও একই স্কুল কোড বা ভ্যাকেন্সি কোডে একই স্কুলের দু’বার নাম রয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার স্কুল কোড বা ভ্যাকেন্সি কোডই বেমালুম গায়েব হয়ে গিয়েছে! কোথাও আবার নতুন করে স্কুল কোড বা ভ্যাকেন্সি কোডে যুক্ত হয়েছে নতুন স্কুলের নাম।
যেমন জানুয়ারিতে প্রকাশিত তালিকায় ২০০১৫১ কোড নম্বরে ছিল বর্ধমানের হাটকালনা গার্লস হাইস্কুলের নাম। সাম্প্রতিক তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ওই স্কুলের নাম আর নেই। তার জায়গায় এসেছে বিল্বেশ্বর হাইস্কুলের নাম। উত্তর দিনাজপুরের ২০০৬১৯ স্কুল কোড বা ভ্যাকেন্সি কোডে ধর্মপুর হাইস্কুলের জায়গায় নতুন তালিকায় চলে এসেছে উত্তর দিনাজপুরেরই ভুইহারা হাইস্কুলের নাম। বেশ কিছু স্কুলের ক্ষেত্রে এই ধরনের গরমিলের অভিযোগ উঠছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, আগের তালিকায় ভ্যাকেন্সি কোড ছিল না, কিন্তু সাম্প্রতিক তালিকায় নতুন করে ভ্যাকেন্সি কোড সংযোজন করে স্কুলের নাম জোড়া হয়েছে। যেমন প্রথম তালিকায় ২০১৮৭২ নম্বরের কোনও স্কুল কোড বা ভ্যাকেন্সি কোড ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক তালিকায় দেখা যাচ্ছে, ২০১৮৭২ কোড নম্বরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ধপধপি হাইস্কুলের নাম সংযোজন করা হয়েছে। একই ভাবে, প্রথম তালিকায় স্কুল কোড বা ভ্যাকেন্সি কোডে যে-স্কুলের নাম ছিল, পরের তালিকায় সেই স্কুলের নামটাই আর নেই! যেমন ২০৭৮৫ কোড নম্বরে হাওড়ার খরফ হাইস্কুল ছিল প্রথম তালিকায়। সাম্প্রতিক তালিকায় ওই ভ্যাকেন্সি কোড নম্বরে কোনও স্কুলের নামই নেই। স্কুলের নামটাই উধাও হয়ে গিয়েছে। পুরনো তালিকায় ব্যারাকপুরের নারিনদাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের কোড নম্বর বা ভ্যাকেন্সি নম্বর ছিল ২০১৫৫২। কিন্তু সাম্প্রতিক তালিকায় ওই কোডে কোনও স্কুলই নেই!
আবার দেখা যাচ্ছে, দু’টি ভিন্ন কোডে রয়েছে একই স্কুলের নাম। যেমন ২০০৮১৩ স্কুল কোড বা ভ্যাকেন্সি কোডে আছে দমদম কুমার আশুতোষ ইনস্টিটিউট ফর বয়েজের নাম। আবার ২০০৮৩৬ কোড নম্বরেও ওই স্কুল হাজির। প্রশ্ন উঠেছে দু’টি কোড নম্বরে একই স্কুলের নাম কেন?
এসএসসি-র চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার অবশ্য দাবি করছেন, সব নিয়ম মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষিকা নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকার শূন্য পদ ছিল ২২৪৫টি। তবে ডাকা হয়েছে ১৮৬৪ জনকে। ‘‘নানা কারণে শূন্য পদের থেকে কম প্রার্থীকে ডাকা হয়েছে। মামলার জন্য কোনও স্কুলের নাম বাদ গিয়েছে, কোনও স্কুলে প্রধান শিক্ষক পরে যোগ দেওয়ায় সেই স্কুলের নাম বাদ গিয়েছে,’’ বলেন সৌমিত্রবাবু।
শিক্ষক সংগঠনগুলি এই যুক্তি মানতে রাজি নয়। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন ‘‘জানুয়ারির তালিকায় যে-স্কুলের নাম ছিল, চূড়ান্ত তালিকায় সে কেন বাদ গেল, কেন একই ভ্যাকেন্সি কোডে অন্য স্কুলের নাম চলে এল, কেনই বা দু’টি ভ্যাকেন্সি কোডে একই স্কুলের নাম এল? ব্যাখ্যা মিলছে না।’’