—ফাইল চিত্র।
আগের দিন যে প্রশ্নে আটকে গিয়েছিল স্টাফ সিলেকশন কমিশন (এসএসসি) ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ, সেই প্রশ্ন খারিজ করেই বিধানসভায় দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় পাশ হয়ে গেল সেই সংক্রান্ত বিল। সরকারি তরফে জানানো হল, দু’বছর আগের আইন বাতিল করে ২০১১ সালে এসএসসি গড়ার আইন যে হেতু পুনর্বহাল হচ্ছে, তাই বর্তমান বিলে আর নতুন করে আর্থিক দায়ভারের প্রসঙ্গ রাখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, দু’বছর আগে তামাদি হয়ে যাওয়া কমিশনের দফতর এবং দৈনন্দিন খরচ চালানোর সংস্থান কোথা থেকে আসবে, সেই ব্যাখ্যা কোথায়? এই প্রশ্ন রেখেই মঙ্গলবার পাশ হয়েছে বিল।
গত সপ্তাহে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টাফ সিলেকশন কমিশন (রিপিলিং) (রিপিলিং) বিল, ২০১৯’ বিধানসভায় পেশ করে আলোচনার মাঝপথেই তা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার পক্ষ। বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, আর্থিক দায়ভারের কথা বিলে নেই। একই বিল আবার পেশ হওয়ার পরে এ দিন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘এই বিলে অর্থনৈতিক দায়ভার কিছু থাকছে না এবং সেই জন্য রাজ্যপালের সম্মতি নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। ২০১১ সালের বিলটিতেই রাজ্যপালের সম্মতি নেওয়া রয়েছে।’’
এক বারের সিদ্ধান্ত বাতিল করার আইনকে আবার বাতিল করার ক্ষেত্রেও কোনও আইনি বাধা নেই বলে আইনমন্ত্রী জানান। তাঁর কথায়, ‘‘কী উদ্দেশ্য, তা বলা থাকলে পুরনো বিলেই কাজ হয়ে যায়। ফলে বিলটি বৈধ।’’ বিলটি সম্পর্কে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের (এজি) লিখিত বক্তব্যও বিধানসভায় পড়ে শোনান আইনমন্ত্রী। সরকারি মুখ্য সচতেক নির্মল ঘোষের আনা সংশোধনী গ্রহণ করে সরকার জানিয়ে দিয়েছে, এসএসসি না থাকাকালীন মধ্যবর্তী সময়ে নিয়োগ সংক্রান্ত যা সিদ্ধান্ত হয়েছে, সবই ২০১১ সালের এসএসসি আইনের এক্তিয়ারভুক্ত করা হবে।
বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান প্রশ্ন তোলেন, পুরনো আইনে ২০১৭ সালে এসএসসি-র মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। ওই কমিশনের জন্য এখন কোনও দফতর, চেয়ারম্যান, কর্মী কিছুই নেই। বিলে দ্রুত সরকারি পদে কর্মী নিয়োগের কথা বলা থাকলেও কর্মী নিয়োগের পরিকাঠামো তৈরি করতে যে আর্থিক সংস্থান প্রয়োজন, তা কোথা থেকে আসবে, সেই ব্যাপারে বিলে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। আইনমন্ত্রী আইনি ব্যাখ্যা দিলেও এই বিষয়টির ব্যাখ্যা চান বিরোধী দলনেতা। এজি-র বক্তব্যের মধ্যেই জবাব রয়েছে বলে প্রসঙ্গটি কার্যত এড়িয়ে যান মলয়বাবু।
সিপিএমের শেখ ইব্রাহিম আলি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যদি শূন্য পদে নিয়োগের ইচ্ছেই থাকে, তা হলে ২০১২ সাল থেকে কত জনকে নিয়োগ করেছেন? যেটুকু নিয়োগ করেছেন, তার সবটাই তো নিজেদের নেতাদের কাছের লোক! মেধার ভিত্তিতে নিয়োগে বাধা কোথায় ছিল?’’ সিপিএমের তন্ময় ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, ‘‘রাজ্যে একটিও দফতর নেই, যেখানে এখন প্রয়োজনের তুলনায় কর্মীর অভাব ৪০%-এর নীচে। সব জেলাশাসকের দফতরেই প্রয়োজনের তুলনায় ৬০% কর্মী কম। নিয়োগের জন্য আইন বদলাচ্ছে কিন্তু নিয়োগ লবডঙ্কা!’’
জবাব দিতে গিয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বাম বিধায়কদের পাল্টা বিঁধে বলেন, ‘‘২০১০-এ পিটিটিআই, অতিথি অধ্যাপক, এসএসকে, এমএসকে-র মতো বিকল্প নামে প্রায় আড়াই লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীকে চাকরি দিয়ে চলে গেলেন আপনারা। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে ২০১১ সাল থেকে তাঁদের নিয়মিত করার কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের আর সুযোগ কোথায়?’’ তবে বর্তমান সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ করছে বলে পার্থবাবু দাবি করেন। তাঁর আশ্বাস, ‘‘এই সরকার সুযোগ থাকলে দেরি হলেও ব্যবস্থা নেয়। দ্রুততার সঙ্গে শূন্যপদে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ করা হবে।’’