WB Municipal Election

WB municipal election 2022: কোথাও বিরোধীশূন্য, কোথাও প্রতিপক্ষ না থাকার মতো, প্রশ্ন খরচের নিরপেক্ষ নজরদারি নিয়ে

নাগরিক পরিষেবা দিতে অনেক বরাদ্দ পায় পুরসভাগুলি। অর্থ-কমিটি এবং মিউনিসিপাল অ্যাকাউন্টস কমিটি বরাদ্দ-খরচের দিকগুলি দেখভাল করে।

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২২ ০৬:২৩
Share:

জয়ের উচ্ছাস। নিজস্ব চিত্র।

পুরভোটে শাসকদল তৃণমূলের এই জয় প্রত্যাশিতই ছিল, দাবি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। কিন্তু প্রায় এক তৃতীয়াংশ পুরসভা বিরোধীশূন্য হয়ে যাওয়ায় কার্যত সিঁদুরে মেঘ দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল। পুরসভার পরিচালন, বিশেষ করে আর্থিক বিষয়ক কমিটিগুলিতে বিরোধী প্রতিনিধিদের থাকাই রীতি। সে ক্ষেত্রে খরচের ‘নিরপেক্ষ’ একটা নজরদারি চালানো সম্ভব। কিন্তু বুধবার যে ফল প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বহু পুরসভা বিরোধীশূন্য হয়েছে তো বটেই, এমনকি, অনেকগুলিতে বিরোধীদের উপস্থিতি রয়েছে না থাকার মতোই।

Advertisement

নাগরিক পরিষেবা দিতে অনেক বরাদ্দ পায় পুরসভাগুলি। আইন অনুযায়ী, পুরসভায় ছ’টি স্ট্যান্ডিং কমিটি ছাড়াও রাখতে হয় অর্থ-কমিটি এবং মিউনিসিপাল অ্যাকাউন্টস কমিটি। স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলি তৈরি হয় ‘ফিনান্স অ্যান্ড রিসোর্স মোবিলাইজ়েশন’, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জল সরবরাহ, পূর্ত, স্বাস্থ্য-শিক্ষা-দারিদ্র দূরীকরণ এবং জনস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত বিষয়ে। অর্থ-কমিটি এবং মিউনিসিপাল অ্যাকাউন্টস কমিটি বরাদ্দ-খরচের দিকগুলি দেখভাল করে। রীতি অনুযায়ী, এই সব ক্ষেত্রে বিরোধীদের প্রতিনিধিত্ব থাকার কথা। ভোট-গবেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর বক্তব্য, এই ভোটে ৩৩টি পুরসভা পুরোপুরি বিরোধীশূন্য। ৮টি পুরসভায় শুধু নির্দল প্রার্থীদের উপস্থিতি রয়েছে। তাঁর কথায়, “সব মিলিয়ে ধরলে ৪১টি পুরসভা কার্যত বিরোধীশূন্য। বিরোধী দল না থাকাটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে শুভ হয় না। মিউনিসিপাল অ্যাকাউন্টস কমিটি বা ফিনান্স কমিটিতেও বিরোধীদের রাখা প্রয়োজন।”

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, আগের দফায় শিলিগুড়ি পুরসভায় সিপিএম, জয়নগর-মজিলপুরে কংগ্রেস এবং তাহেরপুর পুরসভায় সিপিএম ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তখন ‘অসহযোগিতা’-র নানা অভিযোগ উঠেছিল সরকারের বিরুদ্ধে। তবে বাম সরকারের আমলে বহরমপুর এবং কুপার্স ক্যাম্প অনেকবারই বিরোধীদের হাতে ছিল। তখন এমন অভিযোগ তেমন শোনা যায়নি।

Advertisement

রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, “ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। সংঘবদ্ধ অপরাধ হয়েছে। পুরো নির্বাচনই বাতিলের দাবি জানিয়েছিলাম। আদালতেও গিয়েছি। এই ভোটের কোনও ফল গ্রহণ করছি না।” এর সূত্র ধরে বিরোধী দল সিপিএম ও কংগ্রেসের অভিযোগ, যেখানে বিরোধী আছে, সেখানেই অ্যাকাউন্টে নজরদারি বা অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত কমিটি গঠনে নিয়ম মানে না শাসক দল। আর এখন যেখানে বিরোধী থাকবে না, সেখানে নিজেদের লোক বসিয়ে কাজ চালাতে তাদের আরও সুবিধাই হবে!

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘বিধানসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি) বিরোধীদের হাতে দেওয়া সাংবিধানিক রেওয়াজ। সেখানে বিরোধীর নামে তৃণমূলই লোক বসিয়ে কমিটি গড়েছে! জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম মানা হয় এখন? জেলায় প্ল্যানিং কমিটি কার্যত উঠে গিয়েছে। বিরোধীশূন্য পুরসভায় সে ভাবেই শাসক দলের মধ্যে থেকেই কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেওয়া হবে!’’ প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানেরও একই সুর, ‘‘যে পুরসভায় বিরোধী নেই, সেখানে শাসক দলের আরও সুবিধা। এমনিই তো এই সরকার বা দলটা নিয়ম মানে না!’’

বিরোধীদের উদ্দেশে কার্যত কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েই পুরমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “বিরোধীরা নিজেদের প্রার্থীদের জেতাতে না পারলে কী করা যাবে! অন্য দলের লোক না থাকলে কোনও যাচাই থাকবে না, এটার কোনও মানে নেই। সরকারের নজরদারি রয়েছে এবং থাকবেও। সে ব্যাপারে বিরোধীদের চিন্তা না করলেও চলবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement