আনিস খানের অপমৃত্যু বা বগটুই গ্রামে নারী, শিশুদের পুড়িয়ে মারার মতো ঘটনায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশন নীরব। ফাইল চিত্র।
তিন থেকে কমে দুই হয়েছিলেন ওঁরা বছর তিনেক আগেই। তবু এত দিন এক জন সভাপতি (চেয়ারপার্সন) এবং প্রশাসনিক সদস্য ছিলেন। গত ডিসেম্বরের পরে নেই তিনিও। ফলে এ বার রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কার্যত অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়ে উঠল।
আগেও রাজ্য মানবাধিকার কমিশন কী করে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু এ বার আনিস খানের অপমৃত্যু বা বগটুই গ্রামে নারী, শিশুদের পুড়িয়ে মারার মতো ঘটনায় তাদের ‘নীরবতা’ অনেকের কাছেই অসহনীয় ঠেকছে। এখন মানবাধিকার কমিশনে প্রশাসনিক সদস্য রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। ২০১৯-এ অন্যতম বিচারবিভাগীয় সদস্য মণিশঙ্কর দ্বিবেদীর কার্যকাল শেষ হয়। গত ডিসেম্বরে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্তের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। ওই দু’টি পদই ফাঁকা। কমিশনের অস্তিত্বটুকুও না-থাকারই শামিল।
অতীতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় কমিশনের সভাপতি পদে সরে যাওয়ার পরে রাজ্য কিছু দিনের জন্য অস্থায়ী সভাপতি হিসাবে নপরাজিতবাবুকে বসিয়েছিল।
কেন এই হাল কমিশনের? কমিশনের প্রশাসনিক সদস্য নপরাজিতবাবুকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি ওই নিয়োগ করি না।”
সরকারি সূত্রের খবর, নিয়মমাফিক মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি এবং বিচারবিভাগীয় সদস্য হিসাবে হাই কোর্টের এক জন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এবং এক জন প্রাক্তন বিচারপতির নাম রাজভবনে পাঠানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী, বিধানসভার স্পিকার, বিধানসভার বিরোধী দলনেতার এই নাম সুপারিশ করার কথা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলনেতা আপত্তি জানিয়েছিলেন। এর পরে রাজভবনও বেঁকে বসে বলে সরকারি সূত্রের খবর। ফলে, কমিশনের সভাপতি এবং বিচারবিভাগীয় সদস্য নিয়োগ দুটোই থমকে রয়েছে।
বাম আমলে কমিশনের প্রাক্তন সভাপতি বম্বে হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “চেয়ারপার্সন ছাড়া মানবাধিকার কমিশনের তরফে কোনও বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া বা সুপারিশ করার এক্তিয়ার থাকে না।” আর কমিশনের আর এক প্রাক্তন সভাপতি তথা সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোকবাবু বলছেন, “এমনিতেই কমিশন কোনও কাজ করে না! এখন তো ওদের অস্তিত্বই কার্যত নেই।”
বাম আমলেও কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করে সুপারিশ পাঠাত কমিশন। তার সব ক’টি রাজ্য মানেনি। বিষয়টি হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে গড়িয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের আমলে তাঁদের ভূমিকা আরও অনেকটাই সীমিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। ২০১২-র কার্টুন-কাণ্ডে অম্বিকেশ মহাপাত্রের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যত সরাসরি সংঘাতে কমিশনের তরফে সরাসরি তদন্তের নির্দেশ দেন তৎকালীন সভাপতি অশোকবাবু। পুলিশ-প্রশাসনের কোনও ‘ত্রুটি’র জেরে মানবাধিকার কমিশনের সক্রিয়তা এখন এ রাজ্যে সূদূর অতীত। বগটুই বা আনিস খানের ঘটনার পরে কিছু কি ভাবছে মানবাধিকার কমিশন? প্রশ্ন শুনে নপরাজিতবাবু ফোন রেখে দিয়েছেন।