প্রতীকী ছবি।
কোনও পরীক্ষার্থীর বা তার পরিবারের কারও যদি করোনা হয়, সে কী ভাবে মাধ্যমিক দেবে? জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার প্রথম দিনে ছাত্র বা ছাত্রীর সঙ্গে এক জন অভিভাবককে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকার যে-অনুমতি বহু দিন দেওয়া হয়ে আসছে, সেটা কি এ বারেও দেওয়া হবে? দিলে করোনাকালের ভিড় না-করার নিয়মবিধি মানা যাবে কী করে?
সোমবার মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর আগে এই সব প্রশ্নকে ঘিরে ধোঁয়াশা। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যে-সব নিয়ম সাধারণ ভাবে প্রযোজ্য হয়, সেগুলি এ বার কার্যত একই আছে বলে জানাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের বক্তব্য, পরীক্ষার নিয়মাবলিতে পরিবর্তনের ব্যাপারে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এখনও কিছু বলেনি। শুধু করোনা বিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু করোনা এখনও পুরোপুরি বিদায় নেয়নি বলেই নিয়মবিধিতে কিছু বদল দরকার। শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, পরীক্ষার পাঁচ দিন আগেও মূলত করোনাকে ঘিরে নিয়মাবলির কিছু জায়গায় ধোঁয়াশা দ্রুত কাটানো উচিত।
২০২০ সালের করোনার প্রকোপ শুরুর কয়েক দিন আগেই মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছিল। ২০২১ সালে মাধ্যমিক নেওয়া যায়নি। সে-দিক থেকে করোনা আবহে এ বারেই প্রথম এই পরীক্ষা হতে চলেছে। ১১ লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষা পর্ব কী ভাবে পরিচালনা করতে হবে, তার নির্দেশিকা স্কুলগুলি ইতিমধ্যে পেয়ে গিয়েছে। এমনকি, মূল পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির পরীক্ষা পরিচালনা করার বৈঠকও শেষের পথে।
শিক্ষা শিবির সূত্রের খবর, প্রতি বছর পরীক্ষাকক্ষে ছাত্রছাত্রীরা যে-ভাবে বসে অর্থাৎ একটি বেঞ্চে দু’জন, এ বারেও সে ভাবেই বসবে। পরীক্ষাকক্ষে মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, স্মার্ট ঘড়ি, ইলেক্ট্রিক্যাল গ্যাজেট নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। কেউ সে-রকম কিছু নিয়ে গেলে তা বাজেয়াপ্ত করা তো হবেই, পরীক্ষাও বাতিল হতে পারে। পরীক্ষার্থীরা সঙ্গে স্বচ্ছ বোর্ড বা ক্লিপ বোর্ড নিয়ে যেতে পারে। রাখতে পারে স্যানিটাইজ়ারও।
কিন্তু পরীক্ষার্থী বা তার বাড়ির কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে সে পরীক্ষা দিতে পারবে কি না, দিলে কী ভাবে দেবে ইত্যাদি বিষয়ে স্কুলে পাঠানো নির্দেশাবলিতে কিছু বলা হয়নি বলে অভিযোগ। শিক্ষকদের কেউ কেউ নিজের মতো করে বলছেন, চিকেন পক্স বা জলবসন্তের মতো সংক্রামক রোগ হলে যেমন আলাদা ঘরে পরীক্ষা নেওয়া হয়, করোনা হলে তেমনই ব্যবস্থা হবে। এই ধরনের পরীক্ষার্থীর জন্য সব স্কুলেই আলাদা একটি কক্ষ রাখা হচ্ছে। কিন্তু স্কুল-প্রধান ও শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, এই বিষয়ে পর্ষদের তরফে একটি সুস্পষ্ট নীতিনির্দেশিকা থাকা প্রযোজন।
মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন কিছু ক্ষণের জন্য পড়ুয়া-পিছু এক জন অভিভাবক যে স্কুলে ঢোকার অনুমতি পান, এ বার সেই ব্যবস্থাও এখনও পর্যন্ত পাল্টানো হয়নি। শিক্ষক শিবিরের বক্তব্য, এ বার এই নিয়ম পাল্টানো প্রয়োজন। নইলে স্কুলের ভিতরে ভিড় জমে যেতে পারে, অতিমারির নিয়ম অনুযায়ী যেটা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “করোনা পুরোপুরি চলে যায়নি। তাই সুষ্ঠু ভাবে এবং করোনা বিধি মেনে পরীক্ষা পরিচালনার স্বার্থে প্রথম দিনেও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এক জন অভিভাবকের পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে প্রবেশের অনুমতির প্রথা বাতিল করা উচিত বলেই আমরা মনে করি।”
মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কন্ট্রোল রুম চলছে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই। পরীক্ষা শেষের আগে পর্যন্ত তা খোলা থাকবে।