Calcutta University

Calcutta University: স্নাতক সংস্কৃতে নারী-বিদ্বেষী প্রশ্নের নালিশ

একাংশের প্রশ্ন, এমন নারী-বিদ্বেষী প্রশ্ন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যশালী বিশ্ববিদ্যালয় কী ভাবে করতে পারে?

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৪৩
Share:

ফাইল চিত্র।

গার্গী-মৈত্রেয়ীর দেশে উচ্চশিক্ষায় নারী-বিদ্বেষ! তা-ও দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতায়! অভিযোগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই সংস্কৃত অনার্স তৃতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষায় এ বার নারী-বিদ্বেষী প্রশ্ন এসেছে।

Advertisement

গত মঙ্গলবার সংস্কৃত অনার্সের 'সংস্কৃত রাইটিং স্কিল' পত্রের পরীক্ষায় দেবনাগরী হরফে একটি অনুচ্ছেদ দেওয়া হয়েছিল। সেটি পড়ে সংস্কৃতে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কথা পরীক্ষার্থীদের। অভিযোগ সেই অনুচ্ছেদের প্রতিপাদ্য নিয়েই। তাতে লেখা ছিল: ‘শ্রীহীন এক মেয়ের বিয়ে নিয়ে চিন্তিত বাবা-মা। বাবা-মায়ের সেই চিন্তা দেখে মেয়ে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন।’ এই নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং এর তদন্ত চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলি থেকে সংস্কৃতের কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন।

শিক্ষা শিবির সূত্রের খবর, এটি প্রশ্নপত্রের দু’নম্বর প্রশ্ন। প্রশ্নটিতে আর কোনও ‘অপশন’ বা বিকল্প দেওয়া হয়নি। ওই সংস্কৃত অনুচ্ছেদে যা লেখা ছিল, তার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়: ‘মেয়ের বিয়েতে ভিটে বিক্রি করেও পর্যাপ্ত টাকা হবে না। এই শ্রীহীন মেয়েকে কোন পুরুষই বা বিয়ে করতে পারে, এই বিবেচনা করে মা-ও নিশ্চিত ভাবেই বুঝলেন, দাসীবৃত্তিই তার পরিণতি। হতভাগিনী শিশুকন্যা মা-বাবার কটু কথাকে মজা বলেই মনে করত। রূপকথা শুনতে শুনতে তার শিশুমনেও কোনও রাজপুত্রের আগমনের কল্পনাজাল ছড়িয়েছিল। তাই সেই নাবালিকা মিষ্টি হেসে বলল, ঠিক সময়ে রাজপুত্র আসবে। আমাকে দূর থেকে আরও দূরে নিয়ে যাবে। তাই এখন কেঁদো না।’

Advertisement

এর পরে প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে: কেন পর্যাপ্ত টাকা হবে না? মা কী নিশ্চিত বুঝলেন? সেই নাবালিকা কী বলল? কোন প্রসঙ্গে এই অনুচ্ছেদ লেখা হয়েছে? শ্রীহীনা শব্দের অর্থ কী?

বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। বিস্মিত শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। তাঁদের একাংশের প্রশ্ন, এমন নারী-বিদ্বেষী প্রশ্ন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যশালী বিশ্ববিদ্যালয় কী ভাবে করতে পারে? এই প্রশ্নের সব শব্দ সংস্কৃত নয় বলেও অভিযোগও উঠেছে।

অতিমারির এই দুঃসময়ে পড়ুয়ারা ঘরে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নপত্র তৈরি করে কলেজে পাঠায়। পড়ুয়ারা বাড়িতে বসে পরীক্ষা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জানান, সব বিষয়েরই যে-কোনও পত্রের জন্য বেশ কয়েকটি প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। মডারেটরেরা সব প্রশ্নপত্রই দেখেন। যদি দেখা যায়, কোনও প্রশ্ন বিতর্কিত বা ঠিক নয়, সঙ্গে সঙ্গে তা বাতিল করা হয়। তার পরে সব প্রশ্ন বিচার করে চূড়ান্ত করা হয় মূল প্রশ্নপত্র। এ ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন মডারেশনের পরেও কী ভাবে চূড়ান্ত প্রশ্নপত্রে ঠাঁই পেল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে সংশ্লিষ্ট ‘বোর্ড অব স্টাডিজ়’-এর ভূমিকা নিয়েও।

দু’নম্বর প্রশ্নের পাশাপাশি তিন নম্বরে যে-প্রশ্ন রয়েছে, তাতে একটি চিঠি লিখতে বলা হয়েছে। বিষয়: দুর্গোৎসবের শোভা বর্ণনা। অভিযোগ, সেখানে মাকে চিঠি লিখতে বলার জায়গায়, জা-কে লিখতে বলা হয়েছে। জা শব্দের অর্থ, বিবাহিত নারীর স্বামীর ভাইয়ের বৌ। জা-কে চিঠি, না মাকে চিঠি? পুরুষ এবং অবিবাহিত পরীক্ষার্থীরা কী ভাবে জা-কে চিঠি লিখবেন? এই নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রেও মডারেটরের চোখ কী ভাবে এড়িয়ে গেল, সেই প্রশ্নও উঠছে।

পুরো বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানার জন্য উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বুধবার জানান, এই ব্যাপারে খোঁজ নেবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement