জল্পনায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, তিনি বিজেপিতেই রয়েছেন। যদিও গেরুয়া শিবিরে ইদানীং তাঁকে দেখাই যাচ্ছে না। তিনি দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য। কিন্তু জুলাই মাসের গোড়াতেই হায়দরাবাদে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে যোগ দেননি তিনি। কলকাতাতেও দলের কোনও কর্মসূচিতে ইদানীং দেখা যাচ্ছে না।
অন্য দিকে, সম্প্রতি তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে তাঁকে দেখা গিয়েছে এক সামাজিক আমন্ত্রণে। সেই থেকেই শুরু হয়েছিল জল্পনা। রূপা নাকি তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন! তখন রূপা ও কুণাল দু’জনেই ওই সাক্ষাৎ ‘ব্যক্তিগত এবং সৌজন্যমূলক’ বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু জল্পনা থামেনি।
সেই জল্পনা আরও জলবাতাস পেয়েছে বৃহস্পতিবার তৃণমূলের মেগা সমাবেশের আগে। তৃণমূলের একটা অংশের দাবি, ২১ জুলাই তৃণমূলের সমাবেশে থাকতে পারেন পদ্মের রূপা।
তাই কি? বুধবার আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের জবাবে রূপা বললেন, ‘‘সবাই বিক্রি হয় না!’’ তাঁকে কি কাছে টানার চেষ্টা করেছিল শাসক শিবির? সে উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন ‘মহাভারত’ মেগা সিরিয়ালের ‘দ্রৌপদী’।
তবে এটা অনস্বীকার্য যে, অভিনয় থেকে রাজনীতিতে আসা রূপার রাজনৈতিক জীবন হঠাৎ কিছুটা থমকে গিয়েছে। ২০১৫ সালে বিজেপিতে যোগদানের পর প্রথমে মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী ও পরে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন। মাঝে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছিলেন। কিন্তু হাওড়া উত্তর কেন্দ্রে পরাজিত হন তৃণমূলের প্রার্থী প্রাক্তন ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লার কাছে। বিজেপি অবশ্য সেই বছরের অক্টোবরেই রূপাকে রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য হিসাবে রাজ্যসভায় পাঠায়। গত ২৪ এপ্রিল সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে।
দিল্লির বাংলো ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে বাংলায় চলে এসেছেন রূপা। দ্বিতীয়বার রাজ্যসভায় যাওয়ার কথা কি ভাবছেন? রূপা বলেন, ‘‘মনোনীত সদস্য হিসাবে একজনকে দু’বার রাজ্যসভায় পাঠানোর নজির নেই। শুধু শুধু ভাবতে যাব কেন?’’ কিন্তু এখন রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির যা শক্তি, তাতে তো নির্বাচিত হয়েও যাওয়া যায়? রূপা বলেন, ‘‘আমি সে ভাবে কখনও চিন্তা করে দেখিনি। অনেক দিন দিল্লিতে কাটিয়েছি। এখন বাড়ির দিকে একটু নজর দিতে হয়েছে। বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা করা আমার বড় দায়িত্ব।’’
প্রাক্তন সাংসদ রূপাকে অবশ্য রাজ্য বিজেপিতে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে কি রাজনীতিতেই আর দেখা যাবে না তাঁকে? রূপা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই দেখা যাবে। দলে যখন যেমন বলবে, তেমন ভাবে কাজ করব। দলে তো সবাইকে পদ দেওয়া যায় না। কাউকে কাউকে তো পদ ছাড়াও কাজ করতে হয়। দলের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচিতেও যাই।’’ কিন্তু জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে তো তাঁকে দেখা যায়নি। রূপার জবাব, ‘‘সেটা শারীরিক কারণে। দলকে আগেই জানিয়েছিলাম। পায়ের একটা সমস্যায় এখনও ভুগছি। একটু সুস্থ হয়ে গেলেই আবার কাজে নামব। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন, তারপরে লোকসভা নির্বাচন রয়েছে। সেই প্রচারে অংশ নেব।’’
বিজেপির দুই সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এবং অর্জুন সিংহ তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে অনেককে নিয়েই জল্পনা তৈরি হয়েছিল। সেই জল্পনায় রূপার নামও শোনা যাচ্ছে। রূপা অবশ্য বলেন, ‘‘কারা এ সব রটান, কেন রটান, আমি জানি না। আমি মনে করি, জীবনে একটাই রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকা উচিত। সেই বিশ্বাস নিয়েই সারাটা জীবন কাজ করে যেতে চাই।’’ সব শেষে প্রাক্তন সাংসদের সংযোজন, ‘‘আর কাল (বৃহস্পতিবার) কী করব, সেটা নিয়ে খুব কৌতূহল থাকলে আজ (বুধবার) রাত থেকেই বরং আমার বাড়িতে এসে থাকুন!’’