—ফাইল চিত্র।
শেষ মুহূর্তে হলেও উলুবেড়িয়ায় ২১ জুলাই সভা করার অনুমতি পেল বিজেপি। শর্তসাপেক্ষে বিজেপিকে সভা করার অনুমতি দিল কলকাতা হাই কোর্ট। রাত ৮টায় সভা শুরু করতে পারবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে লোক সভায় যোগ দিতে যেতে পারবে। রাত ১০টার পরে সভা চালানো যাবে না।
এ ছাড়াও কিছু শর্ত দিয়েছে আদালত। বলা হয়েছে, সভায় ২০টির বেশি লাউডস্পিকার ব্যবহার করা যাবে না। উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসককে এমন স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে যাতে তিনি মাইক কোথায় লাগানো যাবে তা ঠিক করতে পারবেন। ২০টির বেশি লাউডস্পিকার হলে বাদ দিতেও পারবেন। ওই জায়গায় গত কয়েক মাসের আইন-শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে সভা থেকে কোনও উস্কানিমূলক মন্তব্য করা যাবে না। তবে সভাস্থল পরিবর্তন হয়েছে। আগে যে জায়গায় করবে বলেছিল, সেখানে অনুমতি মেলেনি। বিজেপির দলীয় দফতরের সামনে সভা হবে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে স্থানীয় থানাকে সভাস্থল সম্পর্কে অবগত করতে হবে। পুলিশ সভাস্থল পরিদর্শন করবে এবং দেখবে যে দু’হাজার লোকের জন্য জায়গাটি পর্যাপ্ত কি না। যদি দেখা যায় দু’হাজার মানুষের জন্য সভাস্থল পর্যাপ্ত নয়, তা হলে কত মানুষ নিয়ে সভা করা হবে সে বিষয়ে পুলিশকে অবগত করবে বিজেপি। জাতীয় সড়ক যাতে অবরুদ্ধ না হয়, তা-ও খেয়াল রাখতে হবে। হাওড়ার স্থানীয় মানুষ ছাড়া বাইরের লোক যেন সভায় না আসেন তা নিশ্চিত করতে হবে বিজেপিকে।
আদালতে বিজেপি জানায়, উলুবেড়িয়ায় জাতীয় সড়ক থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বাউড়িয়ার সভাস্থল। এক মাস আগে সেখানে সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বিজেপির আইনজীবী বলেন, ‘‘হাওড়া পুলিশ সুপার (গ্রামীণ)-এর কাছে সভার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। চার দিন আগে পুলিশ জানায় যে, অনুমতি দেওয়া হবে না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এক ব্যক্তি তাঁর জায়গায় সভার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু মনে হয় তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। পরে তিনি ২১ জুলাইয়ে ওই জায়গা দিতে রাজি হননি।’’ এই মন্তব্য বিচারপতি বলেন, ‘‘কোনও ব্যক্তি তাঁর জায়গা ব্যবহার করতে দেবেন কি না, তা আদালত বলে দিতে পারে না। আদালতের সেই এক্তিয়ার নেই।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘অন্য দিন কর্মসূচি করতে আপনাদের অসুবিধা কোথায়?’’ বিজেপির আইনজীবীর দাবি করেন, ‘‘সভার জন্য সমস্ত লোককে বলা হয়ে গিয়েছে। দিল্লি থেকে নেতারা আসছেন। কলকাতায় অন্য সভা থাকার কারণে তাঁরা ভুবনেশ্বর থেকে গাড়িতে করে আসবেন। ওই জায়গার অনুমতি না পাওয়া গেলেও আমাদের কাছে আরও দু’টি বিকল্প রয়েছে। দু’হাজারের মতো লোক হবে।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
তৃণমূলের একুশের সভার দিনের বিজেপির ওই সভা হলে পর্যাপ্ত পুলিশ প্রয়োজন বলে জানান রাজ্যের কৌঁসুলি। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতায় সভায় যোগ দিতে পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম-সহ কয়েকটি জেলা থেকে পাঁচ থেকে সাত হাজার গাড়ি আসবে হাওড়ার উপর দিয়ে। আবার হাওড়া থেকেই কয়েকশো গাড়ি যাবে। এ সবই নিয়ন্ত্রণ করতে প্রচুর পুলিশ দরকার। এ অবস্থায় অন্য সভার উপর নজর দেওয়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘ওরা (বিজেপি) বলছে রাত ৮টায় সভা করার অনুমতি দেওয়া হোক। কিন্তু সে সময় গাড়িগুলি আবার ফিরে যাবে। ওই দিন প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। তা ছাড়া আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখতে হবে। কলকাতায় ৩,৭০০ পুলিশ থাকছে। তা ছাড়া, প্রধান সমস্যা হল সভাস্থলের অনুমতি নেই।’’ বিচারপতি জানান, ২১ জুলাই ভিড়ের জন্য তিনি কী ভাবে কোর্টে আসবেন সে চিন্তা রয়েছে তাঁর। তবে বিজেপির আইনজীবীর দাবি, ‘‘রাজ্যের মনোভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে, তারা কোনও মতেই সভা করতে দেবে না। বিভিন্ন অজুহাত দেখানো হচ্ছে।’ তবে বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনি আইনের কথা বলুন। যেখানে সভা করবেন বলছেন, তাঁরাই যদি অনুমতি না দেয়, পুলিশ কী করবে?’ যদিও বিজেপির আইনজীবীর মন্তব্য, ‘‘ওই স্থানে না হলে আমাদের নিজেদের জায়গা রয়েছে। দলীয় দফতর সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের সভা করতে পারি আমরা।’’