পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা। প্রতীকী ছবি।
একটি রাজনৈতিক ঘোষণা। নিয়োগ-তৎপরতার সূত্রে একটি ইঙ্গিত। আর একটি ‘গোপন’ প্রস্তুতি-বার্তা। এই ত্রিভুজেই আপাতত এবং ক্রমশ জোরালো হচ্ছে জুলাইয়ের মাঝামাঝি এ রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের সম্ভাবনা নিয়ে চর্চা। যদিও এ বিষয়ে কোনও রকম সরকারি ঘোষণা এখনও হয়নি। সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষক মহলের মতেও, শেষ পর্যন্ত ভোটের দিনক্ষণ স্থির হওয়া নির্ভর করবে সামগ্রিক পরিবেশ-পরিস্থিতির উপরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, শাসক দলের ‘উপরমহল’ থেকে কয়েক জন মন্ত্রী তথা জেলা স্তরের নেতার কাছে ইতিমধ্যেই বার্তা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের সময় হিসেবে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নেওয়ার। এই ‘গোপন বার্তা’ পাওয়া নেতাদেরই একাংশের মতে, জুলাইয়ের মাঝামাঝি ভোট হতে পারে বলে ধরে নিয়ে অন্তত তৈরি থাকার কথা বলতে চাইছে দল।
প্রশাসনের অন্দরে এই জল্পনা আরও দানা বাঁধছে নতুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে রাজ্য সরকারের সাম্প্রতিক তৎপরতা দেখে। প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, ১৮ মে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে নতুন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বেছে নিয়েছিল নবান্ন। সংশ্লিষ্ট ফাইল অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল রাজভবনে। যদিও সূত্রের দাবি, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও বার্তা রাজভবন থেকে আসেনি। নবান্নের অন্দরের বক্তব্য, আজ, শুক্রবারের মধ্যে বার্তা না পেলে, পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। এক কর্তার কথায়, “আজ, শুক্রবার ২৬ তারিখ। তার পরের দু’দিন শনি ও রবিবার (ছুটির দিন)। ফলে শুক্রবারের মধ্যেই পরিস্থিতি স্পষ্ট হওয়া উচিত।” এই ঘটনায় এক দিকে যেমন ফের রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপাল সংঘাত বাধবে কি না প্রশ্ন উঠছে, তেমনই অনেকের জিজ্ঞাসা, পঞ্চায়েত নির্বাচন ‘দুয়ারে’ বলে কি এই তৎপরতা?
এ প্রসঙ্গে ভোট-বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে এ কে সিংহ অবসর নেওয়ার পরে তা অনেক দিন ফাঁকা ছিল। তার পরে সৌরভ দাসকে সেই পদে পাঠায় নবান্ন। তখন সামনে কোনও ভোট ছিল না। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন। পঞ্চায়েত ভোট হতে পারে যে কোনও সময়ে। সৌরভ কমিশনারের দায়িত্ব থেকে অবসর নেবেন ২৮ মে। তার আগে তাই নতুন কমিশনার নিয়োগে তৎপর নবান্ন। যাকে মধ্য-জুলাইয়ে ভোটের ইঙ্গিত মনে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
ভোটের জল্পনা উস্কে দিয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগেই করা প্রকাশ্য একটি ঘোষণাও। কিছুদিন আগে তাঁর ‘নবজোয়ার’ কর্মসূচি চলাকালীনই তিনি জানান, ওই কর্মসূচি শেষ হলেই হবে পঞ্চায়েত ভোট। সে ক্ষেত্রেও পাল্লা ভারী মাঝ-জুলাইয়ের দিকে।
কেন? প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ২৫ জুন নবজোয়ার কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন করাতে হলে, অন্তত জুনের মাঝামাঝি ভোট ঘোষণা হতে হবে। কারণ, কমিশন সূত্রের বক্তব্য, সাধারণত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২৮ থেকে ৪২ দিনের ব্যবধানে ভোট করানো যায়। কিন্তু ২৫ জুনের পরে ভোট ঘোষণা হলে, পঞ্চায়েত নির্বাচন জুলাইয়ের শেষ বা অগস্টের শুরুতে গড়িয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তখন রাজ্যে বর্ষার মরসুম। গ্রামীণ ভোট সেই আবহাওয়ায় করা বেশ কঠিন।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে জানাচ্ছেন, নবজোয়ার যাত্রার অভিজ্ঞতা, শাসক দলের নিজস্ব রিপোর্ট বা তাদের নিযুক্ত স্বাধীন সমীক্ষকের পর্যবেক্ষণও ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার নেপথ্যে কাজ করতে পারে। নিয়োগ-দুর্নীতির তদন্ত, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বরাদ্দ বন্ধ থাকার প্রভাব ভোটে কতটা পড়বে, তা-ও বিবেচনার আওতার বাইরে থাকার কথা নয়।