জীবনকৃষ্ণের গ্রেফতারের ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ার পর তা অনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে বিধানসভার সচিবালয় ও স্পিকারকে। — ফাইল চিত্র।
বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার গ্রেফতার নিয়ে তাঁকে যথা সময়ে না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই বিতর্ক আর বাড়াতে চান না খোদ স্পিকার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণর গ্রেফতারি সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সিবিআই স্পিকারকে চিঠি দেওয়ার পরেই যাবতীয় বিতর্কের ইতি চাইছে বিধানসভার সচিবালয়। এ প্রসঙ্গে স্পিকারের ছোট্ট জবাবেই বিতর্কে মিটিয়ে ফেলার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টিতে এখানেই ইতি টানছে বিধানসভা।’’
সোমবার ভোরে সিবিআই গ্রেফতার করে বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণকে। কিন্তু সেই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ার পর তা অনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে বিধানসভার সচিবালয় ও স্পিকারকে। মঙ্গলবার বিকেল তিনটে নাগাদ সিবিআইয়ের এক কর্মী এসে বিধানসভার সচিবালয় বিধায়কের গ্রেফতারি সংক্রান্ত খবর লিখিত আকারে জমা দিয়ে যান। পরে সন্ধ্যায় নিজের সাংবাদিক বৈঠক করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন স্পিকার। বিধানসভার আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করে এ ক্ষেত্রে কি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া য়ায়, তা-ও জেনে নেন স্পিকার।
এর পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে স্পিকার জানিয়েছিলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিবিআই তাঁকে সন্তোষজনক জবাব না দিলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবেন তিনি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে বৃহস্পতিবার নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে চিঠি দেওয়া স্পিকারকে। সেই চিঠি পাওয়ার পরেই বিতর্ক আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন বিমান। বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, এই সংক্রান্ত বিষয়ে স্পিকার আর কোনও নির্দেশ না দেওয়ায় তাঁরাও আর কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকারের সঙ্গে সিবিআই ও ইডির সংঘাত কোনও নতুন ঘটনা নয়। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর নারদা কাণ্ডে ১৭ মে কলকাতার মেয়র-মন্ত্রী তথা কলকাতা বন্দরের বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম, কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র, প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও বেহালা পূর্বের প্রাক্তন বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। সে ক্ষেত্রেও বিধানসভার স্পিকার ও সচিবালয়কে অন্ধকারে রেখেই গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। পর পর এমন ঘটনা ঘটায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিধানসভার স্পিকার বিমান। বিধানসভাকে না জানিয়ে কী ভাবে বিধানসভার সদস্যদের গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। পাশাপাশি বার বার এমন ঘটনা ঘটায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আধিকারিকদের বিধানসভায় তাঁর সামনে হাজির হতে ডেকেও পাঠিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে বিধানসভার সচিবালয়ের সঙ্গে দুই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার চিঠি চালাচালি হওয়ার পর সংঘাত থেমে গিয়েছিল। কিন্তু জীবনকৃষ্ণর গ্রেফতারির পর নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। তবে সিবিআইয়ের জবাবি চিঠির পর বির্তক আপাতত স্থগিত বলেই মনে করা হচ্ছে।