আরও বেশি করে রাজনৈতিক পাঠ নেওয়ার অপেক্ষায় বৈশাখী। ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ বিরতির পর নতুন বছরে নতুন উদ্যমে রাজনীতির ময়দানে নামছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যক্তিগত কারণে দু'জনেই এখন রয়েছেন ভুবনেশ্বরে। কলকাতায় ফিরছেন ৩ জানুয়ারি, রবিবার বিকেলে। তার পর ৪ জানুয়ারি, সোমবার থেকেই যুগলে বিজেপি-র কলকাতা জোন সামলানোর কাজে নেমে পড়বেন। ভুবনেশ্বর থেকে ফোনে বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে তেমনই জানালেন বৈশাখী।
২০১৯ সালের ১৪ অগস্ট তৃণমূল ছাড়ার পরে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। ২০২০ সালে ২৭ ডিসেম্বর রাজ্য বিজেপি-র কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক হলেন শোভন। কমিটির সহ-আহ্বায়ক বৈশাখী।
মাঝের সময়টা শুধু বিতর্ক এবং বিতর্ক। অনেক মান-অভিমানও। বারবার কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখীর মানভঞ্জন চালিয়ে যেতে হয়েছে কখনও বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব, কখনও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। দীর্ঘসময় বিজেপি-র কাছে থেকেও দূরেই রয়ে যান শোভন-বৈশাখী। সে ভাবে কোনও দলীয় কর্মসূচিতে দেখাও যায়নি তাঁদের। সেই পর্ব যে শেষ হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল গত নভেম্বরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে কলকাতায় যুগলের সাক্ষাতের পরে। এর পরেই দায়িত্ব ঘোষণা। তাতে বেজায় খুশি বৈশাখী। জানালেন, আর মান-অভিমান নেই। তাঁর কথায়, ‘‘যে এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটাকে শোভন একদিন তৃণমূলের দুর্গ বানিয়েছিলেন। এ বার সেই এলাকাকেই উনি বিজেপি-র দুর্গ বানাবেন।’’
আরও পড়ুন: বিজেপি-তে যোগ, শিরে সংক্রান্তি নিয়ে এখন অধীর অপেক্ষা মকর সংক্রান্তির
সেই ‘দুর্গ-গঠনে’ তাঁর ভূমিকা কেমন থাকবে? বৈশাখী জানালেন, এর আগে তিনি রাজনীতি করলেও সেটা ছিল সভা-সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়া পর্যন্ত। এই প্রথম তিনি সাংগঠনিক কাজ করবেন। তিনি উত্তেজিত। পাশাপাশিই তিনি কিঞ্চিৎ টেনশনেও। বৈশাখীর কথায়, ‘‘এক্সাইটমেন্ট আছে। কিন্তু তার সঙ্গে একটু টেনশনও আছে।’’ তবে ‘ছাত্রী’ বৈশাখীর চিন্তা এবং টেনশন কমিয়ে দিচ্ছে ‘মাস্টারমশাই’ শোভনের উপর তাঁর অকুণ্ঠ ভরসা। বৈশাখীর কথায়, ‘‘টিচার হিসেবে যাঁকে পেয়েছি, তিনি তো সত্যি কথা বলতে, অনেক অভিজ্ঞ। তাই চিন্তা কম।’’ তবে প্রধান শিক্ষক শোভন হলেও বিজেপি-র অন্যান্য নেতার কাছেও ‘বাধ্য ছাত্রীর মতো’ রাজনীতির পাঠ নিতে চান বৈশাখী। সেই তালিকায় রয়েছেন বিজেপি-তে নবাগত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও। বৈশাখী বললেন, ‘‘আমার কাছে একটা বিরাট পাওনা যে, শোভনবাবু যেমন আমার মার্গদর্শন করাচ্ছেন, তেমনই আমি অরবিন্দ মেননজি, কৈলাসজিদের (বিজয়বর্গীয়) সমর্থন পেয়েছি সব সময়। সেটাও একটা বড় পাওনা। শুভেন্দু’দার সঙ্গেও আমার ভাল সম্পর্ক। ওঁর কাছেও আমি শিখতে পারব। আমাকে রাজনৈতিক শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে এঁদের সকলের বড় গুরুত্ব থাকবে বলেই আমার মনে হয়।’’
শোভন এখন কলকাতায় না থাকলেও বসে নেই রাজ্য বিজেপি। ইতিমধ্যেই কলকাতা জোনের কাজ পুরোদমে শুরু করে দিয়েছে তারা। শোভনের অনুপস্থিতিতে কাজ সামলাচ্ছেন কলকাতা জোনের আহ্বায়ক দেবজিৎ সরকার। আর সকলের উপর রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল। নরেন্দ্র মোদী- অমিত শাহর অত্যন্ত ভরসার নেতা সুনীল উত্তরপ্রদেশ বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)। কিন্তু আপাতত তিনি পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা জোনের দায়িত্বে। এই জোনে রয়েছে কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সব বিধানসভা। এছাড়াও রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার কিছু বিধানসভা। এই এলাকায় বিজেপি-র শক্তি রাজ্যের অন্যান্য এলাকার তুলনায় খানিকটা কম। তাই নীলবাড়ি দখলে আনতে এই জোনে বিশেষ জোর এবং গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, কলকাতা জোনের জন্য আলাদা দফতরও তৈরি হবে। আপাতত ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতর থেকে কলকাতা জোনের কাজ সামলানো হলেও খুব তাড়াতাড়ি জোনের আলাদা দফতর হবে। বৈশাখী জানিয়েছেন, শোভন কলকাতায় ফেরার পরেই ঠিক হয়ে যাবে নতুন কার্যালয়ের ঠিকানা। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, নতুন দায়িত্ব পাওয়ার জন্য কলকাতায় বিভিন্ন জায়গায় শোভনের সংবর্ধনা হবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে বড় মাত্রায় যোগদানও হবে বলে দাবি বৈশাখীর। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের বহু পুরনো কর্মী, যাঁরা বসে গিয়েছেন, তাঁরা এই দায়িত্ব ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। তাঁরা যোগাযোগও শুরু করেছেন। মালদহ থেকে কাকদ্বীপ— অনেকেই যোগাযোগ করছেন।’’
আরও পড়ুন: ‘কুপুত্র’ শুভেন্দুর সঙ্গে বিধানসভায় লড়তে তৈরি হচ্ছেন ‘নন্দীগ্রামের মা’
আগামী রবিবার কলকাতায় ফিরে সোমবার কাজ শুরু করার পরিকল্পনা থাকলেও বসে নেই শোভন। আগে থেকেই তিনি না কি হোমওয়ার্ক সেরে রেখেছেন। দেখে-দেখে সে সবও শিখছেন বৈশাখী। শোভনকে যে তিনি ‘রাজনৈতিক গুরু’ হিসেবে দেখেন, সেটা বুঝিয়ে বৈশাখী বললেন, ‘‘আমার রাজনীতির হাতেখড়ি ওঁর কাছে। সেটা আমার কাছে একটা বিরাট বড় পাওনা। সব সময় আমাকে সহযোগী হিসেবেই দেখেছেন। সেটা আমি তৃণমূলে থাকাকালীনও। আমাকে সব সময়েই উৎসাহ দিয়েছেন। শুধু আমাকে বলে নয়, যাঁদের মধ্যে তিনি দক্ষতা দেখতে পেয়েছেন, তাঁদেরই সামনে এগিয়ে দিয়েছেন। মনে হয় আমাকে দেখে আগামিদিনে বহু বৈশাখী অনুপ্রাণিত হবে।’’ বৈশাখী বারবারই বলছিলেন, কলকাতা জোন বিজেপি-র জন্য অত্যন্ত কঠিন এলাকা। সেখানে দলের শক্তিবৃদ্ধির জন্য সময়টা বড় কম পাওয়া গেল। তবে কি তিনি মনে করেন রাজ্য বিজেপি দায়িত্ব ঘোষণা করতে অনেকটা সময় নিয়ে নিল? জবাবে পুরনো মান-অভিমান মনে রাখতে না-চাওয়া বৈশাখীর বক্তব্য, ‘‘আসলে যে কোনও কিছুর জন্যই একটা সঠিক সময় থাকে।’’