আনুষ্ঠানিকভাবে কবে তৃণমূলে ফিরবেন বৈশাখী-শোভন? ফাইল চিত্র।
কালীঘাটে শোভন-বৈশাখী। ২০১৯ সালের ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় এটা যতটা ‘চমক’ ছিল, ২০২২ সালে অবশ্য ততটা নয়। সে বার বিজেপিতে থাকা শোভন চট্টোপাধ্যায় বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ফোঁটা নিতে এসেছিলেন। এখন অবশ্য শোভনের রাজনৈতিক বাস কালীঘাটের অনেকটাই কাছাকাছি। একই ভাবে কালীঘাটের কাছাকাছি কাঁচরাপাড়ার মুকুল রায়ও। ফোঁটা নিতে এসে দেখাও হয়ে গেল শোভন ও মুকুলের।
বিজেপি ছেড়ে দিলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও তৃণমূলে ফেরেননি কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। বৃহস্পতিবার দিদির হাতে ফোঁটা নেওয়ার পর সেই আনুষ্ঠানিক যোগদানের প্রসঙ্গও উঠল। শোভন বুঝিয়ে দিলেন, তিনি তৃণমূলেই রয়েছেন। আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বৈশাখী স্পষ্ট বললেন, ‘‘তৃণমূলে যোগদানে আনুষ্ঠানিকতার মূল্য নেই।’’ অর্থাৎ, শোভন এবং তৃণমূলের মধ্যে কোনও আনুষ্ঠানিকতা বা ঔপচারিকতার প্রয়োজন হয় না।
পুরনো দিনের কথা মনে করলে মমতার প্রিয় ‘কানন’ (শোভনকে এই নামেই ডাকেন মমতা) ফি-বছর ডাক পেতেন ভাইফোঁটায়। কিন্তু সুর কাটে ২০১৮ সালে। নভেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন শোভন। তার পরে শোভনকে কলকাতার মেয়র পদও ছেড়ে দিতে বলেন মমতা। দু’দিনের মাথায় সে পদেও ইস্তফা দেন মমতার একদা ‘ছায়াসঙ্গী’ কানন। সেই বছরই ১৪ অগস্ট বৈশাখীকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন। সে বছর ভাইফোঁটায় কালীঘাটে আসেননি শোভন। কিন্তু ২০১৯ সালে বৈশাখীকে নিয়ে বিজেপিতে থাকা শোভন এসেছিলেন ফোঁটা নিতে। ২০২০ সালে তা হয়নি। তখন সামনে বিধানসভা নির্বাচন। ফুটছে রাজ্য রাজনীতি। তা ছাড়াও করোনার কারণে মমতার বাড়ির ফোঁটায় খুব এখটা ধুমধামও হয়নি। করোনাকাল কেটে গিয়েছে। বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে কার্যত সম্পর্কচ্ছেদ। পক্ষান্তরে, নবান্ন সফরে মমতার সঙ্গে দূরত্ব কেটে গিয়েছে। ভাইফোঁটায় ফের হাসিমুখে কালীঘাটে কানন।
কবে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে ফিরবেন শোভন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘দিদি যখনই ডাকবেন, তখনই আসব। আমার সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়। আমন্ত্রণ লাগে না সব সময়।’’ আর বৈশাখী বলেন, ‘‘ওঁদের দু’জনের পারস্পরিক টানটা যে আবার মজবুত হয়েছে, তাতে আমি ভীষণ খুশি। আমি চাই সেটা সারা জীবন থাকুক।’’ একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দিদি আর ভাইয়ের সম্পর্ক একই রকম ছিল এবং আছে। মাঝখানে ভুল বোঝাবুঝির মেঘ ছিল। সেটা কেটে গিয়েছে। দলে ফেরানো বা না ফেরানোর কিছু নেই। ওঁকে দলেরই এবং সক্রিয় বলে মনে করেন।’’ এর পরেই বৈশাখীর সংযোজন, ‘‘শোভনের এ বার সরাসরি রাজনীতিতে ফেরা উচিত। ভুল বোঝাবুঝির মেঘ কেটে গিয়েছে। তৃণমূলে যোগদানে আনুষ্ঠানিকতার মূল্য নেই। দিদি ওঁকে অত্যন্ত স্নেহ করেন।’’
দিদির কাছে ফোঁটা নিয়ে শোভন ‘এক ব্যাগ উপহার’ পেয়েছেন বলেও জানান বৈশাখী। সঙ্গে বলেন, ‘‘ভাইফোঁটায় দিদির কাছে এসে আশীর্বাদ পাওয়া তো এক বিরাট প্রাপ্তি! শোভন যেমন ভাইফোঁটা পেল, তেমন সঙ্গে থাকায় আমিও আশীর্বাদ পেলাম। এটা খুবই আনন্দের মুহূর্ত। আজকের দিনে ওঁর মধ্যের মমত্বকে আরও ভাল করে দেখা যায়। সবাইকে দেখভাল করা, সবাইকে খাওয়ানো। সেটাই খুব ভাল লাগছিল।’’
প্রসঙ্গত, এ ভাবেই দিদির আশীর্বাদ নিতে গত ২২ জুন নবান্নে গিয়েছিলেন শোভন-বৈশাখী। সে দিন মমতার সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে বৈশাখী বলেছিলেন, ‘‘দিদির নির্দেশ মতোই কাজ করবে শোভন।’’ জানিয়েছিলেন, উভয় তরফের মধ্যে ‘রাজনৈতিক’ আলোচনাই হয়েছে। এর পরে জল্পনা হয়েছিল, ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবস কর্মসূচির মঞ্চে শোভনকে দেখা যেতে পারে। কিন্তু তা হয়নি। অপেক্ষা আছে, কবে থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলের হয়ে রাজনীতির ময়দানে নামবেন শোভন। বৃহস্পতিবার সেই ইঙ্গিতও মিলল যে, আনুষ্ঠানিকতা না থাকলেও ‘সক্রিয়’ হচ্ছেন মমতার ভরসার কানন।
শোভন ছাড়াও বৃহস্পতিবার কালীঘাটে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত বক্সি, অরূপ বিশ্বাস, জাভেদ খান-সহ প্রতি বার যাঁদের ফোঁটা দেন, তাঁদের অধিকাংশকেই ফোঁটা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।