সঙ্গের ছবিটি রামেশ্বের সরেনের বানানো শিল্পকর্মের নিদর্শন।
মেলবন্ধনের চালচিত্র
রূপান্তরই জীবনের নিয়ম। শিল্পেরও। সেই রূপান্তর ধরা পড়ে নানা সময়ে, নানা এলাকায়, নানা শিল্পীর কাজে। সেই রূপান্তরকে ধরার চেষ্টাই দেখা গেল ‘ট্রান্সফরমেশন টু’ নামে একটি শিল্প প্রদর্শনীতে। ‘চালচিত্র অ্যাকাডেমি’-র উদ্যোগে এই প্রদর্শনী সম্প্রতি হয়ে গেল কলকাতার গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারিতে। সহায়তায় ছিল কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ললিতকলা অ্যাকাডেমি।
সেই প্রদর্শনীতেই জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম লাগোয়া প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছিলেন দুই শিল্পী রামেশ্বর সরেন ও যজ্ঞেশ্বর হাঁসদা। শিল্পী হওয়ার কোনও প্রথাগত শিক্ষা তাঁদের নেই। দিন চলে জমিতে টুকটাক কাজ করে। কিন্তু তাতে কী? তাতে তো আর শিল্পীসত্তাকে বেঁধে রাখা যায় না। তাঁদের তৈরি অনুপম ভাস্কর্য মুগ্ধ করল উপস্থিত সকলকেই। তাঁদের শিল্পকর্ম বিক্রি হল এমন অঙ্কে, যা দৈনন্দিন কাজ করে উপার্জন করাও তাঁদের প্রত্যাশাতীত।
এক ছাদের তলায় সাবেক ও আধুনিক শিল্পকলাকে নিয়ে আসার কাজই চালচিত্র করে চলেছে নিরলস, জানালেন সংস্থার অন্যতম শিল্পী মৃণাল মণ্ডল। সেই জন্যই যজ্ঞেশ্বর, রামেশ্বরের সঙ্গেই এই প্রদর্শনীতে ছিল বিশ্বের অন্যতম মহিলা থ্রিডি শিল্পী ট্রেসি লি স্টামের কাজ। ছিল বিশ্ববিখ্যাত শিল্পপ্রদর্শনী চিনের ‘ইয়ানচু বাইনালে’তে ডাক পাওয়া শিল্পী সুশান্ত মহারানার ভাস্কর্যও। ছিল বাংলার সাবেক আলপনা, গালার পুতুল, মাটির পুতুলও। মৃণাল বললেন, ‘‘সমসাময়িক শিল্পকর্মের সঙ্গে গ্রামেগঞ্জের আনাচে কানাচে থাকা সাবেক শিল্পীদের তুলে আনাই আমাদের লক্ষ্য। পরেও আমরা এই বিষয়ে কাজ করে যাব।’’
এমন মঞ্চে নিজেদের কাজ আনতে পেরে অভিভূত যজ্ঞেশ্বর, রামেশ্বরেরা। দিন চালাবার লড়াইয়ের ফাঁকে অবসরে তাঁরা যে সব জিনিস গড়ে তুলতেন, তা থাকত ঘরের কোণে। সুযোগ পেলে গ্রামের মেলায় বড়জোর বসতেন তাঁরা। ঝকঝকে গ্যালারিতে তা ঠাঁই পাবে, ভাবতেও পারেননি। এই সুযোগ তাঁদের কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেবে, বলছেন তাঁরা। আঁধার থেকে আলোয় এসে ঝকঝক করা তাঁদের ভাস্কর্যও যেন সে কথাই বলছিল।
সঙ্গের ছবিটি রামেশ্বের সরেনের বানানো শিল্পকর্মের নিদর্শন।
নাটক-শিক্ষা
গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার নাটক নিয়ে কর্মশালা হয়ে গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম নেতাজি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। ঝাড়গ্রাম শহরের কুরকূট নাটকের দল আয়োজিত ওই কর্মশালাটির শিরোনাম ছিল, ‘আমরাও পারি’। নেতাজি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের বাছাই করা ৩৬ জন পড়ুয়াকে শারীরিক এবং মানসিক চর্চার মাধ্যমে মনোসংযোগ এবং ভাল থাকার নানা কৌশল শেখানো হয়। উপস্থিত ছিলেন হালিশহরের নাট্যকর্মী অমিতাভ সাহা, ঝাড়গ্রামের নাট্যকর্মী উপল পাহাড়ি, শ্যামল পাল, সুশান্ত দে, তাপস নন্দীরা। উপস্থিত পড়ুয়ারা তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে নিজেদের ভাবনায় তিনটি অনু নাটক শুরু করে। কর্মশালার শেষ দিনে ওই তিনটি অনু নাটককে জুড়ে তৈরি হয় একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক।
গানের কর্মশালা
বাংলা গানের কর্মশালা হয়ে গেল উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠানটি হয় গোবরডাঙার ঐকতান সভাগৃহে। পরিচালনায় ছিল গোবরডাঙা লোকবিকাশ সংসদ। সহযোগিতায় গোবরডাঙা পুরসভা। উপস্থিত ছিলেন নাট্যকর্মী আশিস চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গীত শিল্পী মানসী ঘোষদস্তিদার, আয়োজক সংস্থার সভাপতি রীনা গিরি-সহ অনেকে। হাবরা, অশোকনগর, বনগাঁ, চাঁদপাড়া-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৫০ জন এই কর্মশালায় যোগ দেন। প্রশিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন সঙ্গীতের অধ্যাপিকা পাপড়ি চক্রবর্তী, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খোলবাদক হরেকৃষ্ণ হালদার, সঙ্গীত পরিচালক অশোক ভদ্র প্রমুখ। কর্মশালাটি পরিচালনা করেন লোকসঙ্গীত শিল্পী এবং গবেষক আশিস গিরি।
আলোকচিত্র
সম্প্রতি বসিরহাট রবীন্দ্রভবনে হয়ে গেল সৈকত সরকারের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। তিন দিন ধরে চলে প্রদর্শনীটি। উদ্বোধন করেন মৃৎশিল্পী লীলাবতী সরকার। সৈকতের বাড়ি বসিরহাটের ধলতিথা গ্রামে। তিনি দিল্লিতে আলোকচিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছিল ২৫টি ছবি। ছবিগুলির বেশির ভাগ দিল্লিতে তোলা হয়েছে। সৈকত শুধু আলোকচিত্রী নয়, সে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিও বানায়। আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মঞ্চে দেখানো হয় তাঁর তৈরি একটি ১৫ মিনিটের তথ্যচিত্র।
সুরের ছোঁয়া
আঙুলে প্লেক্ট্রাম পরে এক সময় বাংলা যন্ত্র-সঙ্গীতে ঝড় তুলেছিলেন বটুক নন্দী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁদের কাছেই আসানসোলের এই মানুষটির গিটার শিক্ষা। তিনি দীপক রায়। জন্ম ১৯৩৯-এর ১৫ জানুয়ারি। ছোট থেকেই রেডিও আর টেলিভিশনে গিটারের আওয়াজ শুনলেই মনটা আনচান করে উঠত তাঁর। তালিম শেষে সত্তরের দশক থেকে পেশাদার শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। ১৯৭০ সালে বের হল রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরের রেকর্ড। এর পরে দীপকবাবু আকাশবাণী, দূরদর্শন, ত্রিপুরা দূরদর্শন, মহাজাতি সদনেও নিয়মিত অনুষ্ঠান করেছেন। অনুষ্ঠান করেছেন দক্ষিণবঙ্গের নানা জেলায়। গিয়েছেন মুম্বই, হায়দরাবাদ, পুদুচেরি, ইলাহাবাদ, পটনা, দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ১৯৭৫-এ কলামন্দিরে সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ভি বালসারা, দেবব্রত বিশ্বাস, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়-সহ বহু দিকপালের সঙ্গে এক মঞ্চে অনুষ্ঠান করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। অর্গান ও বাঁশিতেও সমান পারদর্শী মানুষটির গিটারে হাত দিলেই মায়ের কথা মনে পড়ে। কেন? দীপকবাবু জানান, তাঁর মা কৃষ্ণচন্দ্র দে’র ছাত্রী পদ্মাদেবীর প্রেরণাতেই তাঁর গিটারে হাত দেওয়া।