সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের। সূত্রের খবর, নাগপুর বিমানবন্দরে দু’জনের সাক্ষাৎ হয়। একাধিক বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কথাও হয়েছে।
ওই সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে শান্তনু বলেছেন, ‘‘বাংলার খেলার উন্নতি কী ভাবে করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আরও অনেক কিছু নিয়েই কথা হয়েছে। সবটা বলার নয়।’’ শান্তনুর বক্তব্যের শেষ দুটি বাক্যই সৌরভকে নিয়ে জল্পনায় আবার জল-হাওয়া জুগিয়েছে। তবে সৌরভের তরফে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও কিছুই বলা হয়নি।
শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ সৌরভের। নিজস্ব চিত্র।
রাজনীতির আঙিনায় সৌরভ আনুষ্ঠানিক ভাবে পা রাখবেন কি না, তা নিয়ে রাজ্যবাসী তো বটেই, সম্ভবত দেশবাসীরও কৌতূহলের সীমা নেই। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সৌরভের রাজনীতিতে যোগদানের জল্পনা দানা বেঁধেছিল। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে সৌরভের বিজেপিতে যোগের গুঞ্জন ঘিরে সরগরম ছিল রাজ্য রাজনীতি। কিন্তু সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন সৌরভই। রাজনীতিতে তিনি ‘আপাতত’ যোগ দিচ্ছেন না, সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন মহারাজ।
কিন্তু সৌরভ তখনকার মতো রাজনীতি ছেড়ে এলেও রাজনীতি তাঁকে ছাড়ে না! যখনই তাঁর সঙ্গে কোনও ওজনদার রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রীর সাক্ষাৎ বা কথা হয়, তখনই আবার সৌরভের রাজনীতিতে যোগদানের জল্পনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সে তাঁর বাড়িতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহই নৈশভোজে যান বা সৌজডন্য সাক্ষাৎকার করতে যান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনিতে মমতার সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। কিন্তু পাশাপাশিই এমনও শোনা গিয়েছিল যে, সমস্ত হিসেব উল্টে দিয়ে সৌরভের বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার পিছনে ‘অমিত-শক্তি’ কাজ করেছিল। ঘটনাচক্রে, বোর্ডে সৌরভের ‘ডেপুটি’ অমিতের পুত্র জয় শাহ।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, আগামী তিন বছর সৌরভ-জয়ের বোর্ডের পদে থাকতে বাধা নেই। তবে কী হবে, তা নির্বাচনেই ঠিক হবে। ক্রিকেটমহলের জল্পনায় শোনা যাচ্ছে, সৌরভ আইসিসি চেয়্যারম্যান হবেন। জয় হবেন বোর্ড সভাপতি। তবে তার পিছনেও যে জাতীয় স্তরের রাজনীতির অঙ্ক থাকবে, তা স্পষ্ট। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে সৌরভের দেখা হওয়ার ঘটনা বাড়তি মাত্রা পেয়ে যাচ্ছে।
বস্তুত, বিধানসভা নির্বাচনের পরেও সৌরভের রাজনীতিতে পদার্পণের জল্পনা এক বারের জন্যও থামেনি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই সেই গুঞ্জন নতুন মাত্রা পেয়েছে। ২০২১ সালে সৌরভের জন্মদিন ৮ জুলাইয়ে শুভেচ্ছা জানাতে তাঁর বেহালার বাড়িতে হলুদ গোলাপ ফুল নিয়ে গিয়েছিলেন মমতা। সূত্র মারফত জানা গিয়েছিল, সে দিনের আলাপচারিতায় সৌরভকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব ‘প্রত্যাখ্যান’ করেন মহারাজ। যদিও এ নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।
সেই ঘটনাপ্রবাহের পর চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে বেহালায় সৌরভের বাড়িতে নৈশভোজে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত। সেখানে প্রায় ৪৫ মিনিট ছিলেন মোদীর ‘সেনাপতি’। শাহের সঙ্গে সৌরভের সেই নৈশভোজ ঘিরেও জোর চর্চা হয়েছিল। কিন্তু নৈশভোজের পরের দিনই একটি অনুষ্ঠানে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের পাশে বসে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘কাছের মানুষ’ বলেছিলেন সৌরভ। ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সৌরভের স্ত্রী ডোনাও। মহারাজের রাজনীতিতে যোগদানের জল্পনা প্রসঙ্গে ডোনা বলেছিলেন, ‘‘সৌরভ রাজনীতিতে আসবে কি না, জানি না। তবে এলে ভাল কাজই করবে।’’
সম্প্রতি রেড রোডে পুজোর উৎসবেও মমতার সঙ্গে এক মঞ্চে ছিলেন সৌরভ। তার পরে এই শান্তনু-সাক্ষাৎ। তবে নাগপুরের ওই সাক্ষাৎ নেহাতই ‘ঘটনাচক্র’ বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, জাহাজ দফতরের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সৌরভের ‘বাংলার খেলার উন্নতি’ নিয়ে কী আলোচনা হতে পারে! পুরো ভেঙে বলছেন না শান্তনুও। অতএব জল্পনা আবার পাখা মেলছে।