ফাইল চিত্র।
দুপুরে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়ছেন। সারা দিন তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তরঙ্গ সৃষ্টি হল। রাতে আবার নিজেই জানালেন, দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দলের কেন্দ্রীয় নেতা বি এল সন্তোষ এবং যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্যের ‘নির্দেশ’ পেয়ে পদ তিনি ছাড়ছেন না। এই ভাবেই বুধবার সারা দিন নিজেকে ভাসিয়ে রাখলেন সৌমিত্র খাঁ।
তবে পদ ছাড়বেন না বলে জানালেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগগুলি থেকে অবশ্য সরে আসেননি সৌমিত্র। ফেসবুক লাইভে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিরোধী দলনেতা দিল্লি গিয়ে ক্রমাগত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ভুল বোঝাচ্ছেন। এমন একটা ভাব করছেন, যেন দলে তিনিই সব এবং তিনিই সব চেয়ে বেশি আত্মত্যাগ করেছেন!’’ সৌমিত্রের আরও অভিযোগ, শুভেন্দু যা করেন, সব নিজের ও পরিবারের স্বার্থে।
শুভেন্দু অবশ্য ‘সৌমিত্রের সঙ্গে আমার ছোট ভাইয়ের মতো সম্পর্ক’ বলে বিষয়টি লঘু করতে চেয়েছেন। তবে সৌমিত্রের এই ক্ষোভ কেন্দ্রে মন্ত্রী হতে না পারার কারণে হয়ে থাকতে পারে বলেও একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত দিতে ছাড়েননি শুভেন্দু। তাঁর কথা, ‘‘সমস্ত ফেসবুক লাইভকে অত সিরিয়াসলি নিতে নেই। রাজ্যে মন্ত্রিসভা গঠনের সময় তৃণমূলের অনেক বিধায়কও ফেসবুকে অনেক কথা বলেছিলেন। সৌমিত্রের হয়তো কোনও কারণে দুঃখ হয়ে থাকবে। সব কিছুকে অত গুরুত্ব দিতে নেই। এই ব্যাপারটাকেও আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না।’’ চেপে না রেখে মনের কথা প্রকাশ করাকে ‘ভাল ব্যাপার’ বলে মন্তব্য করে সৌমিত্র চাইলে তাঁকে সহযোগিতার কথাও বলেছেন শুভেন্দু।
নিজের দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু সম্পর্কে সৌমিত্র বলেছেন, ‘‘উনি অর্ধেক বোঝেন, অর্ধেক বোঝেন না।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বলেও লাভ হয় না। বিধানসভা ভোটের ফলের দায়ও আমি নিচ্ছি। তাই আর যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি থাকতে চাই না।’’
জবাবে দিলীপবাবুও সৌমিত্রের উদ্দেশে মন্ত্রী হতে না পারার ক্ষোভের কথাই সামনে আনেন। তিনি বলেন, ‘‘ফেসবুক পোস্ট দিয়ে রাজনীতি হয় না। দল ক্ষমতায় যাওয়ার ‘লঞ্চিং প্যাড’ নয়। কেউ হয়তো মন্ত্রী হওয়ার লাইনে থেকেও মন্ত্রিত্ব না পেয়ে হতাশ হয়েছেন।’’ পাশাপাশি, অন্য দল থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের বিজেপির শৃঙ্খলার কথা মনে করিয়ে দিলীপবাবুর মন্তব্য, ‘‘কোনও প্রাপ্তি কম হলেই আমাদের বিধায়ক, সাংসদ, কর্মীরা বিশৃঙ্খল কথা বলেন না। কিন্তু অন্য দল থেকে যাঁরা নতুন এসেছেন, তাঁরা দলের আদর্শ, শৃঙ্খলা বোঝেন না।’’
এ দিনই আবার সামাজিক মাধ্যমে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে মুখ খুলে ফের তৃণমূলের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন বিজেপিতে গিয়ে ভোটে হারা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু দিন ধরেই তিনি তৃণমূলে ফিরতে সচেষ্ট। শুভেন্দুর উদ্দেশে এ দিন তাঁর বক্তব্যের মূল সুর— যে দল বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকারে এসেছে, তার মুখ্যমন্ত্রীকে ‘অযথা’ আক্রমণ না করে পেট্রল-ডিজ়েল এবং রান্নার গ্যাসের দাম কমানোই এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।