পাশে: অনশন-মঞ্চে বসে আছেন সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত পামেলা দাস। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
চিঠিতে স্বাক্ষর করে এসএসসি-র চাকরিপ্রার্থী অনশনকারীদের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার আবেদন জানিয়েছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। রবিবার, অনশনের ২৫তম দিনে ওই কর্মপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়ালেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, অনশনকারীদের প্রতি সরকারের উদাসীনতা হৃদয়হীনতা ও নিষ্ঠুরতায় পরিণত হয়েছে।
অনশনকারীদের চার প্রতিনিধি এ দিন সৌমিত্রবাবুর বাড়ি যান। তিনি তাঁদের একটি চিঠি লিখে দেন। ‘‘সরকার এখনও কোন সদর্থক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছেন না। এই উদাসীনতা যে হৃদয়হীনতা ও নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে, তা আমাদের কাছে অতীব বেদনাদায়ক মনে হয়েছে। আমি সরকারকে সর্নিবন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি, যথোপযুক্ত সহানুভূতির সঙ্গে এই সমস্যার সমাধান করুন,’’ এ ভাবেই চিঠি শেষ করেছেন সৌমিত্রবাবু।
প্রতাপ গুহরায় নামে এক অনশনকারী বলেন, ‘‘সৌমিত্রবাবু আমাদের কথা মন দিয়ে শুনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমরা ওঁকে কিছু লিখে দিতে বলি। অসুস্থতার মধ্যেই উনি চিঠি লিখে সই করে দেন। উনি জানান, শরীর ভাল নেই। নইলে উনি নিজে অনশন-মঞ্চে আসতেন।’’
পরে ফোনে যোগাযোগ করা হলে সৌমিত্রবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের দিকে যে কেউ নজর দিচ্ছে না, তা আমার মনে হচ্ছিল, বিশেষ করে শঙ্খদার বক্তব্য দেখে। এই ভাবে ফেলে না-রেখে এখনই সরকারকে এই সমস্যার প্রতিকার করতে হবে।’’
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অনশনের ২৫তম দিনে নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতি (এবিটিএ)-র এক দল প্রতিনিধি মিছিল করে অনশন-মঞ্চে আসেন। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘‘এসএসসি-র নিয়োগ পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার অভাব আছে। ২০১২ সালের আগে কিন্তু প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষা হত। তখন মেধা-তালিকাও ছিল স্বচ্ছ। কখনও কোনও এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অনশনে বসতে হয়নি।’’
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা সেই চিঠি।
২৫ দিন ধরে কোন্নগর থেকে অনশন-মঞ্চে আসছেন পামেলা দাস। সেরিব্রাল পলসির জন্য লাঠি নিয়ে হাঁটেন। অনশন-মঞ্চে তিনিও বসে ছিলেন চড়া রোদের মধ্যে। পামেলা বলেন, ‘‘আমি প্রতিবন্ধী বলে রাতে থাকতে পারি না। তবে রোজ সকালে মা-বাবার সঙ্গে মঞ্চে চলে আসছি।’’
অনশনে অসুস্থ হয়ে শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হন তানিয়া শেঠ। এ দিন কিছুটা সুস্থ হয়েই ফিরে এসেছেন অনশন-মঞ্চে। তিনি জানান, ২৫ দিনে অসুস্থ ৭৯ জন। তবু সরকার কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করেনি। ‘‘মঙ্গল বা বুধবার শিক্ষামন্ত্রীর গড়া কমিটির কাছে গিয়ে আমাদের অভিযোগ জমা দিয়ে আসব,’’ বলেন তানিয়া।
অনশনকারীদের প্রশ্ন, ওয়েটিং লিস্টে তাঁদের র্যাঙ্কের সঙ্গে প্রাপ্ত নম্বর লেখা হচ্ছে না কেন? এই জন্যই স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ উঠছে। ফি-বছর বহু শিক্ষক অবসর নিচ্ছেন। অনেক স্কুল উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হচ্ছে। অনেকে শিক্ষকতার নিয়োগপত্র পেয়েও স্কুলে যোগ দিচ্ছেন না। সেই সব শূন্য পদ ‘আপডেট’ করলেই ওয়েটিং লিস্টে থাকা সকলের চাকরি হয়ে যায়, বলছেন আন্দোলনকারীরা।
স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। তৃতীয় দফার কাউন্সেলিং হবে শীঘ্রই। উত্তরবঙ্গে নিখিল বঙ্গ অধ্যক্ষ পরিষদের বার্ষিক সভার পরে কমিশন-প্রধানকে দোল খেলতে দেখা গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, চাকরিপ্রার্থীরা যখন অনশন করছেন, সেই সময়ে উনি কী ভাবে দোল খেলছেন? বক্তব্য জানতে ফোন এবং এসএমএস করা হলে কমিশন-প্রধান কোনও উত্তর দেননি।