নিহত প্রদ্যুৎ বসু ও তাঁর স্ত্রী গোপা। —ফাইল চিত্র
সোফায় পড়ে মায়ের নিথর দেহ। বাবার দেহ পাশের ঘরে। অন্য ঘরে রক্তাক্ত অবস্থায় বসে ছেলে।
এমনই বীভৎস ও মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হাওড়ার শিবপুর। বুধবার বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে দুই মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। পুলিশ তালা ভেঙে উদ্ধার করে দু’টি দেহ। উচ্চশিক্ষিত ছেলে চাকরি না পেয়ে অবসাদ থেকেই বাবা-মাকে খুন করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। বাবা-মাকে খুনের পর ওই যুবক নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। নিহতদের নাম প্রদ্যোৎ বসু ও গোপা বসু। ছেলে শুভজিৎ বসুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মৃতদেহ পচাগলা হওয়ায় কী ভাবে খুন করা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, শুভজিৎ মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন। তাঁর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে এবং শুভজিৎকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
শিবপুর কৈপুকুর লেনের একটি আবাসনের চার তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে কয়েক দিন ধরেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। বুধবার সকালে তা চরমে ওঠে। প্রতিবেশীরা দরজায় ধাক্কাধাক্কি করলেও কেউ দরজা না খোলায় শিবপুর থানায় খবর পাঠান তাঁরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। দু’টি মৃতদেহ এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ওই যুবককে বসে থাকতে দেখে কার্যত হতবাক হয়ে যায় তারা।
আরও পড়ুন: বিজেপি নেতার মৃত্যু তুফানগঞ্জে, খুনের অভিযোগ ওড়াল তৃণমূল
পুলিশের দাবি, মা-বাবাকে খুনের কথা স্বীকার করেছে শুভজিৎ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে আরও মর্মান্তিক তথ্য। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভজিতের বাবা প্রদ্যোৎ ‘ব্রিজ অ্যান্ড রুফ কোম্পানি’র অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তাঁর কার্যত কোনও রোজগার ছিল না। অন্য দিকে শুভিজিৎ এমসিএ পাশ। কিন্তু সেই শিক্ষাগত অনুযায়ী চাকরি পাননি তিনিও। ফলে পরিবারে অভাব-অনটন চলছিলই। লকডাউনের সময় আরও সঙ্কটে পড়ে পরিবার। এই সব কারণেই মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন শুভজিৎ। সেই অবসাদ থেকেই খুন বলে মনে করছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
পুলিশের জিম্মায় অভিযুক্ত শুভজিৎ। —নিজস্ব চিত্র
আরও পড়ুন: ঘরে বসেই আধ ঘণ্টায় কোভিড টেস্ট, আমেরিকায় অনুমোদন পেল সেল্ফ-টেস্টিং কিট
মা-বাবাকে খুনের পর তিনি নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে দাবি করেছেন শুভজিৎ। পুলিশ সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে। তবে এখনও কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি। অন্য দিকে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই বাড়ির কেউই তেমন বাইরে বেরোতেন না।