রাজ্যে ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে রয়েছেন। ফাইল চিত্র।
নাগরিকদের চিকিৎসায় দৈনিক প্রায় ছ থেকে আট কোটি টাকা খরচ হচ্ছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর আক্ষেপ, কিছু বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম এই প্রকল্পকে মুনাফা অর্জনের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। রোগী ভর্তি হওয়ার পরে দ্রুত রোগ নির্ণয় না করে বিভিন্ন পরীক্ষা করেই কয়েক দিন কাটানো হচ্ছে। আবার এক প্যাকেজে ভর্তি করে দেখানো হচ্ছে অন্য প্যাকেজ। কোথাও হয়েছে এক রোগ, বলা হচ্ছে আর এক রোগ!
বুধবার কলকাতায় ‘প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য কার্যালয়ের উদ্বোধনে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য-অধিকর্তা। সেখানেই এই আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। অজয়বাবু বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অহেতুক টাকা খরচ করা হচ্ছে। তাই সকলে মিলে সচেতন হতে হবে। না হলে, এখন দুই-তিনটি প্যাকেজ প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, আগামী দিনে হয়তো আরও কয়েকটি প্যাকেজ বন্ধ হয়ে যাবে।’’
রাজ্যে ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে রয়েছেন। প্রকল্পের টাকা অহেতুক খরচে রাশ টানতে ইতিমধ্যেই জরুরি চিকিৎসার জন্য একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের খরচ বেঁধে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। আবার এক শ্রেণির সরকারি চিকিৎসক স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প থেকে মুনাফা লাভের আশায় বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে বেশি পরিষেবা দিচ্ছেন বলেও পর্যবেক্ষণ স্বাস্থ্য শিবিরের। তাই সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের সমালোচনাও শোনা গিয়েছে স্বাস্থ্য-অধিকর্তার কথায়। তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক বছরে হয়তো চারটি ছানি অস্ত্রোপচার করছেন, সেখানে বাইরের বেসরকারি হাসপাতালে অসংখ্য অস্ত্রোপচার করছেন। অজয়বাবুর মন্তব্য, ‘‘দু’জায়গাতেই প্র্যাকটিস করুন, তাতে কিছু বলার নেই। কিন্তু সরকারের থেকে মাইনে নেবেন আর সরকারি পরিষেবা দেবেন না, সেটা ঠিক নয়। তাই কড়া ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।’’
বিভিন্ন নার্সিংহোমের পরিকাঠামো নিয়েও সরব হয়েছেন অজয়বাবু। তিনি জানান, কিছু নার্সিংহোমে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সেখানে এক জনও প্রশিক্ষিত নার্স নেই। সে ক্ষেত্রে নার্সিংহোমটি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া পথ নেই। স্বাস্থ্য-অধিকর্তার কথায়, ‘‘অন্তত এক জন আরএমও-কে হাসপাতালে থাকতেই হবে। প্রশিক্ষিত নার্স নেই, আরএমও নেই, এ ভাবে চিকিৎসা পরিষেবা চলতে পারে না।’’ অজয়বাবুর আক্ষেপ যুক্তিসঙ্গত বলেই দাবি ‘প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটালস’-র রাজ্য চেয়ারম্যান শেখ আলহাজউদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘‘কিছু বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে। বারবার বলার পরেও কর্ণপাত করছে না। বিমা সংস্থার কর্মীরাও এতে মদত দিচ্ছেন।’’