বিরোধীদের নজিরবিহীন আক্রমণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। —ফাইল চিত্র
করোনার মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে রাজ্যে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যপাল থেকে বিরোধী দলের নেতারা। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্ন সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠকে বিরোধীদের এক হাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কিছু কিছু লোক আছে, যারা শুধু ঘেউ ঘেউ করে ঘুরে বেড়ায়! অর্থ দফতরকে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ৩৪ বছরে সিপিএমের জমানায় যা ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছতা এখন নিয়ে আসা হয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাদের কটাক্ষ, ভক্ষককেই রক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘ন’বছর সরকার চালাচ্ছি। কেউ বলতে পারবে না আমি এ সব নিয়ে কোনও দিন কাউকে বলেছি, এটা নয় ওটা করুন। আমাদের সরকার যথেষ্ট স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করে। একমাত্র সরকার যেখানে দফতরগুলি নিজেদের মতো করে কাজ করে। কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হয় না।’’ তাঁর বক্তব্য, সাধারণ মানুষ কোনও অভিযোগ করলেও সত্যতা যাচাই করে নেওয়া হয়। কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তদন্ত করে দেখে নেওয়া হয়। ঠিক সে ভাবেই অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসায় তদন্ত করে দেখে নেওয়া হবে। এ নিয়ে এত হইচই করার কোনও কারণ নেই।
কোভিডের সরঞ্জাম কেনার প্রসঙ্গে মমতার মন্তব্য, ‘‘কী এমন হয়েছে? পুরো প্রক্রিয়া মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, অর্থসচিব, স্বাস্থ্যসচিব দেখে নিচ্ছেন।... এ রাজ্যে সরকারি কেনাকাটায় যে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়, তা অন্য কোথাও হয় না। অর্থ দফতরের নিজস্ব অডিট বিভাগ রয়েছে। প্রতিটি পদক্ষেপ দেখার জন্য দফতরে দফতরে অর্থ দফতরের প্রতিনিধি রয়েছেন। তাঁরা সব কিছু দেখে তবেই ছাড়পত্র দেন।’’ মমতার মতে, মহামারী বা দুর্যোগের সময় পরিস্থিতি সামলাতে সরকারকে অতি দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কিন্তু কোভিডের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা রেখেই কাজ হয়েছে
সরকার পরিচালনায় এ রাজ্যে যে ধরনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়, তা অন্য কোথাও হয় না বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যে কী ভাবে সব চলছে, সেটাও দেখা হোক। আইসিএমআরের কেনা করোনা পরীক্ষার কিটও তো ফেরত নিতে হয়েছে। তা কেন হল?’’ তিনি জানান, করোনা মোকাবিলার জন্য বিশেষ তহবিল তৈরি হয়েছিল। তাতে ১৫০ কোটি টাকা জমা পড়েছে। অর্থ দফতর তা খরচ করেছে। পুরোটাই স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়েছে। এর পরেই পিএম কেয়ার্স তহবিলের দিকে ইঙ্গিত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের এখানে কত দামে মাস্ক কেনা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু টেক কেয়ার ফান্ডে কত টাকা জমা পড়েছে। কে দিয়েছে, কোথায় খরচ হয়েছে তার হিসেব কে দেবে?’’
মুখ্যমন্ত্রীর দাবির প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘তিনি নিজেই নিজেকে শংসাপত্র দিচ্ছেন! আমরা কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই তদন্তের দাবি তুলছি না। দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগের বিচারবিভাগীয় তদন্ত হতে পারে বা পরিষদীয় তদন্ত কমিটি গড়া যেতে পারে। যদি মুখ্যমন্ত্রীর কিছু লুকোনোর না থাকে, তা হলে তদন্তে আপত্তি কী?’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘কয়েক দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী একটা কমিটি গড়লেন। আবার এখন নিজেই বলে দিলেন, কোনও অনিয়ম হয়নি। কেনাকাটা দেখভালের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই আবার অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন। ভক্ষককেই রক্ষকের দায়িত্ব দিলে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে!’’ বাম জমানার ৩৪ বছরে অস্বচ্ছতা বা কেলেঙ্কারির নানা অভিযোগ তুলেও তৃণমূলের সরকার অজস্র কমিশন গড়ে কোনও কালো দাগ বার করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন সুজনবাবু।
রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিয়েছে। করোনা মোকাবিলার সরঞ্জাম কেনাতেও দুর্নীতি হয়েছে। আমার কাছে তথ্য আছে, ৫০০ টাকার জিনিস কিনে ৫০০০ টাকা দেখানো হয়েছে। জিনিস বিক্রেতারা সব মমতাজি’র পরিবারের আশপাশের লোক বা মুখ্যসচিবের আশপাশের লোক। আর যাঁরা দুর্নীতি করেছেন, তাঁদের নিয়েই মমতাজি কমিটি করেছেন!’’