Barasat

WB Board Examination: উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়ন পদ্ধতির পুনর্বিবেচনা চেয়ে শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি অভিভাবকদের

অভিভাবকদের মতে, উচ্চ মাধ্যমিকের ফল এক জন পড়ুয়ার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ। তাই একাদশ শ্রেণির ফলের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ ঠিক হবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বারাসত শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২১ ১৭:৩৯
Share:

শিক্ষামন্ত্রীকে পাঠানো সেই চিঠি। নিজস্ব চিত্র।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে চিঠি লিখলেন অভিভাবকদের একাংশ। মঙ্গলবার বারাসত গার্লস স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকরা ওই চিঠি পাঠিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তাঁরা জানিয়েছেন, এই মূল্যায়ন পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করা হোক। কারণ হিসাবে লেখা হয়েছে, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলের উপর নির্ভর করবে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল, বিষয়টা জানত না পড়ুয়ারা। তা ছাড়া অনেকেই একাদশ শ্রেণির পরীক্ষাকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে দেয় না। ফলে এই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হলে সেটা পড়ুয়াদের জন্য ভাল হবে না।

Advertisement

অভিভাবকদের মতে, উচ্চমাধ্যমিকের ফল এক জন পড়ুয়ার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই ফলের ভিত্তিতেই কোন কলেজে সে ভর্তি হবে বা কোন বিষয়কে সে বেছে নেবে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে। কাজেই একাদশ শ্রেণির ফলের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা ঠিক হবে না বলেই তাঁদের মত। অভিভাবকরা শিক্ষামন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে বিকল্প একটা উপায় বাতলেছেন। তাঁদের দাবি, মাধ্যমিকের সব চেয়ে ভাল নম্বর পাওয়া চারটি বিষয়ের নম্বরের বেশি শতাংশ উচ্চ মাধ্যমিকের পুনর্মূল্যায়নে কাজে লাগালে পড়ুয়াদের সুবিধা হবে। তা ছাড়া প্রতি বছর একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের প্রাপ্ত নম্বর উচ্চশিক্ষা সংসদে পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট স্কুল থেকে। কিন্তু এ বার অতিমারির কারণে অনেক স্কুল সেই নম্বর পাঠাতে পারেনি। তাই মূল্যায়ন পদ্ধতি ঘোষণার দিনই সংসদ জানিয়ে দিয়েছিল, একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল দ্রুত স্কুলগুলোকে তাদের কাছে পাঠাতে হবে। এ বিষয়ে ওই অভিভাবকদের সংশয়, যে স্কুলগুলো সময় মতো একাদশ শ্রেণির ফল পাঠায়নি সংসদে তারা এখন তাদের পড়ুয়াদের বেশি বেশি নম্বর দিয়ে দিতে পারে। কারণ, সংসদ একাদশ শ্রেণির প্রশ্নপত্র তৈরি করলেও উত্তরপত্র দেখে না। স্কুলগুলো শুধুমাত্র ফল পাঠিয়ে দেয়। তাড়াহুড়ো করে পাঠানো ফল পাঠানোর সময় যদি বেশি নম্বর দেওয়ার ঘটনা ঘটে, তা হলে সাধারণ মানের পড়ুয়াদের সঙ্গে মেধাবী পড়ুয়াদের প্রাপ্ত নম্বরের ফারাক অনেক কমে যাবে। তাই সামগ্রিক কারণ এবং সম্ভাবনাগুলো একত্রিত করে উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়নে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন ওই অভিভাবকরা।

কোভিড আবহে এ বছর মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে কি না তা নিয়ে বিস্তর সংশয় ছিল। সেই সংশয় কাটাতে রাজ্য সরকার ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। পাশাপাশি পরীক্ষা হওয়া উচিত কি না তা নিয়ে জনমতও চাওয়া হয় সরকারের তরফে। শেষমেশ পরীক্ষা বাতিলের পক্ষেই রায় গিয়েছে। পরীক্ষা বাতিল হলেও পড়ুয়াদের নম্বর কীসের ভিত্তিতে দেওয়া হবে তা নিয়েও একটা সংশয় তৈরি হয়। শেষমেশ মূল্যায়ন পদ্ধতিতেই পরীক্ষার নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

Advertisement

মূল্যায়ন পদ্ধতি কী ভাবে হবে তারও একটা নমুনা দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং সংসদ। নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর এবং দশম শ্রেণির ইন্টারনাল ফর্মেটিভ অ্যাসেসমেন্টে প্রাপ্ত নম্বরকে সমান গুরুত্ব দিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার মার্কশিট তৈরি হবে। অর্থাৎ এই মূল্যায়ন হবে ৫০-৫০ হারে। উচ্চমাধ্যমিকের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের মাধ্যমিকে যে চারটি বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে পরীক্ষার্থী তার সেই প্রাপ্ত নম্বরের ৪০ শতাংশ এবং ২০২০-র একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় (থিওরি) প্রাপ্ত নম্বরের উপর ৬০ শতাংশ।

শুধু অভিভাবকরাই নন, একাধিক স্কুলের শিক্ষকরাও এই পুনর্বিবেচনার পক্ষে। উত্তর ২৪ পরগনার আধহাটা হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক দেবাশিস চক্রবর্তী মনে করেন, মূল্যায়নের যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে সেটায় আরও কিছু পরিবর্তন করা দরকার। তাঁর কথায়, ‘‘যে পদ্ধতিতে মূল্যায় করা হবে বলে জানানো হয়েছে, তাতে অপেক্ষাকৃত খারাপ মানের ছাত্রছাত্রীরা বেশি লাভবান হয়ে যাবে। একই সঙ্গে এই পদ্ধতিতে ভাল এবং খারাপের ফারাক কমে যাবে অনেকটা।’’

বারাসত স্কুলের এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বলেন, “একাদশ শ্রেণির নম্বর উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হবে। ফলে আমাদের নম্বরের হার অনেকটাই কমে যাবে। যার ফলে আগামী দিনে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অসুবিধার মুখে পড়তে পারি আমরা।” তাই মূল্যায়নের ব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার পক্ষেই সায় দিচ্ছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement