Junior Doctor Hunger Strike

চিকিৎসকদের পাশে নাগরিক সমাজ, পাল্টা তোপ শাসক দলেরও

নাগরিক সমাজ ও বিশিষ্ট জনেদের একাংশের তরফে বুধবার ই-মেল পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব পন্থের কাছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ০৪:৫০
Share:

আর জি করের নির্যাতিতার মা-বাবা ও পরিজনদের অবস্থানে সংহতি জানাতে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, ধ্রুবজ্যােতি সাহা-সহ সিপিএমের যুব নেতৃত্ব। নিজস্ব চিত্র।

পুজোর মধ্যেই ধর্মতলায় অনশন কর্মসূচি নিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের আন্দোলনের প্রতি এ বার সংহতির বার্তা এল নাগরিক সমাজের তরফে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বও এক সুরে দাবি করছেন, রাজ্য সরকারই চিকিৎসকদের অনশনের পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় অবশ্য প্রতিবাদী চিকিৎসকদের আলোচনায় ডেকেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। তবে তার আগেই দিনভর সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সমাজের নানা অংশ।

Advertisement

নাগরিক সমাজ ও বিশিষ্ট জনেদের একাংশের তরফে বুধবার ই-মেল পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব পন্থের কাছে। গণ-স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আর জি করের ঘটনার পরেও নানা জায়গায় যৌন নিগ্রহ, হেনস্থার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ-প্রশাসনের খামতি (যেমন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা) এবং কোথাও কোথাও পুলিশই তেমন নিগ্রহে অভিযুক্ত হওয়ায় (পার্ক স্ট্রিট থানার ঘটনা) সার্বিক ভাবে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি হয়েছে। তাই জুনিয়র ডাক্তারেরা বাধ্য হয়েই আমরণ অনশন শুরু করেছেন’। সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়ে ওই সই রয়েছে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, কৌশিক সেন, বিনায়ক সেন, পবিত্র সরকার, গৌতম ভদ্র-সহ শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আইন জগতের অনেকের।

আর জি কর কাণ্ডের বিচার-সহ ১০ দফা দাবিকে সামনে রেখে অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন ‘শিল্পী সাংস্কৃতিক কর্মী বুদ্ধিজীবী মঞ্চের’ সভাপতি তথা নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, মীরাতুন নাহার, বিমল চট্টোপাধ্যায়, সুজাত ভদ্র, শতরূপা সান্যাল, পল্লব কীর্তনীয়া প্রমুখ। বিভাসেরা জানিয়েছেন, তাঁরা আজ, বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় চিকিৎসকদের অনশন-মঞ্চে এবং তার পরের দিন আর জি কর-কাণ্ডে নিহতের মা-বাবা ও পরিজনদের ধর্নাস্থলে গিয়ে সংহতি জানাবেন। পাশাপাশি, শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা যে ভাবে চিকিৎসকদের ‘প্রচ্ছন্ন হুমকি’ দিচ্ছেন, তারও তীব্র নিন্দা করা হয়েছে মঞ্চের তরফে। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের অনশনের সমর্থনে কাল, শুক্রবার রাজ্যের ৬টি জায়গায় তাঁরা ১২ ঘন্টার অনশন-অবস্থানের ডাক দিয়েছেন।

Advertisement

এরই বিপরীতে আবার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ‘হুমকি-প্রথা’র অভিযোগ নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে প্রতিপক্ষ অংশকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগও উঠেছে। রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের প্রায় ২৫ জন ছাত্র এ দিন এই অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে দেখা করেছেন। এই অংশের ছাত্রদের অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিচ্ছিন্ন করার ‘চক্রান্ত’ চলছে। রাজ্য সরকার এই চাপের কাছে নতিস্বীকার করলে পুজোর পরে তারাও অবস্থান ও অনশনের পথ নেবেন বলে ভাবনা-চিন্তা করছেন। কুনাল জানিয়েছেন, ছাত্রদের এই অংশের বক্তব্য তিনি সংশ্লিষ্ট মহলে পৌঁছে দেবেন।

প্রতিবাদী চিকিৎসকদের কর্মসূচি ও পুজোর মধ্যে তাঁদের ‘অভয়া পরিক্রমা’কেও ‘চক্রান্তের অঙ্গ’ বলে তোপ দেগেছেন কুণাল। তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘‘‘মানুষ ঠাকুর দেখতে পথে নামছেন দু-তিন দিন ধরেই। দোকান-বাজারও চলছে। এর মধ্যে ঘুরে ঘুরে গোলমালে প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা বড় চক্রান্তের অঙ্গ! যাঁদের ইচ্ছা, ধর্মতলার ধর্না-মঞ্চে যাবেন। কিন্তু তাঁরা ঘুরে ঘুরে অস্থিরতা তৈরি করবেন, এ সব কেন? সিবিআই চার্জশিটের পরেও পুজোর মধ্যে কেন অনশন, কেনই বা ঘুরে ঘুরে উত্তেজনা তৈরির অপচেষ্টা?’’

বিরোধীরা অবশ্য আছে প্রতিবাদীদের পাশেই। আর জি করের নিহত চিকিৎসকদের পরিবার পানিহাটিতে যে অবস্থান চালাচ্ছেন, সেখানে এ দিন গিয়েছিলেন সিপিএমের যুব নেতৃত্বের তরফে মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, ধ্রুবজ্যাতি সাহারা। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী বক্তব্য, ‘‘বিচার চেয়ে নির্যাতিতার বাবা-মা বাড়ির সামনে ধর্নায় বসেছেন। এই লড়াইয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত তাঁদের পাশে আছি, সঙ্গে আছি।’’ অনশনরত চিকিৎসকদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারও ফের বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য আমরা সব রকম ভাবে সহায়তা করতে প্রস্তুত। পুজোর সময়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যাতে কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে, তার জন্য রাজ্য সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে সর্বদল বৈঠক ডাকতে হবে।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, ‘‘এই রাজ্যে সকলেরই ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা। চিকিৎসকেরাও তার বাইরে নন। সকলের দফা এক, দাবি এক, মমতার পদত্যাগ! কেউ মুখে বলছেন, কেউ মুখে বলছেন না কিন্তু কাজের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।’’ দলের সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকদের এই আন্দোলন ঘোষণা-সর্বস্ব এই সরকারের অন্তঃসারশূন্যতাকে প্রকাশ্যে এনে দিচ্ছে। যে কোনও স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় যা হয়ে থাকে, পশ্চিমবঙ্গে আলাদা কিছু হচ্ছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement