দূরত্ব বিধি শিকেয় তুলে ঘেঁষাঘেঁষি করে ট্রেনে আসার অভিযোগ উঠেছে।
কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ প্রথম শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ঢুকল হাওড়ায়। মহারাষ্ট্র থেকে গত ২৬ তারিখ রওনা হয়ে প্রায় ৫০ ঘণ্টা পর ট্রেনটি এ দিন হাওড়ায় ঢোকে এবং কিছু যাত্রীকে নামিয়ে ফের মালদা রওনা দেয়। কিন্তু এ দিনও দূরত্ব বিধি শিকেয় তুলে ঘেঁষাঘেঁষি করে ট্রেনে আসার অভিযোগ উঠেছে। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন জেলার বাসে ওঠার সময়ও দূরত্ব বিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
হাওড়া স্বাস্থ্য দফতরের এক অফিসার জানান, মহারাষ্ট্র থেকে যে সব যাত্রী হাওড়ায় নামলেন, তাঁদের সকলের স্ক্রিনিং করা হয়েছে। অনেকেরই জ্বর ও করোনার উপর্সগ রয়েছে। তাঁদের কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। কিছু যাত্রীকে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।
মহারাষ্ট্র থেকে ট্রেন আসতে ২০-২২ ঘণ্টার বদলে ৫০ ঘণ্টা লাগল কেন? হাওড়া স্টেশনে উপস্থিত রেলের এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘বিভিন্ন স্টেশনে চেন টেনে শ’য়ে শ’য়ে শ্রমিক নেমে গিয়েছেন। এ ছাড়া খাবার, জল নিতে ট্রেনকে মাঝেমাঝেই বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়াতে হয়েছে।’’ এ দিন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০টি বিভিন্ন জেলার বাসের ব্যবস্থা করা হয়। হাওড়া, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার শ্রমিক ও পরিবারের সংখ্যা বেশি ছিল। ট্রেন থেকে নামতেই যাত্রীদের প্রথমে স্যানিটাইজ় করে থার্মাল গান দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। হুগলির খানাকুলের বাসিন্দা আনন্দ মাঝি বলেন, ‘‘স্ত্রী, পুত্র নিয়ে অনেক কষ্টে ট্রেনে উঠেছিলাম। ঘেঁঘাঘেঁষি করে এসেছি। খাবার ও জলও ঠিক মতো পাইনি।’’ যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেনে জ্বর, সর্দিতে বেশ কয়েক জন ভুগছিলেন।
আরও পড়ুন: নয়া আক্রান্ত দ্বিগুণ, ব্যস্ততা হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে
এ দিন শুধু মুম্বই থেকে হাওড়াগামী ৭টি শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন ঢুকেছে খড়্গপুরে। সেগুলিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে উত্তরবঙ্গের দিকে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত বর্ধমানে দাঁড়িয়েছে ৪টি, রামপুরহাটেও ৭টি, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্টেশনে ৪-৭টি ট্রেন। এই ভিড় সামলে পরিযায়ীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বাসে তুলতে হিমশিম খেয়েছে বেশির ভাগ জেলা প্রশাসন। আবার চেন টেনে মাঝপথে নেমে গিয়েছেন অনেকে। তাঁদের না হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, না হয়েছে থার্মাল স্ক্রিনিং। বাড়ি গিয়ে তাঁরা অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা করলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাই বাড়বে।
আরও পড়ুন: করোনা-কাঁটা নিয়েই নামল প্রথম উড়ান
জেলা আধিকারিকেরা অনেকেই বলছেন, আমপানের পরে মুখ্যমন্ত্রী কম ট্রেন পাঠানোর অনুরোধ করেছেন। তার পরেও চাপাচাপি করে শ্রমিক তুলে ট্রেন পাঠানো হচ্ছে। বর্ধমান, খড়্গপুরে যে শ্রমিকেরা নেমেছেন, তাঁদের শুধু থার্মাল স্ক্রিনিং করে বাসে চাপিয়ে গন্তব্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “একসঙ্গে এত শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন আসায় বাড়তি চাপ তো রয়েছেই।” খড়্গপুরে প্রতিটি ট্রেন থেকে নেমেছেন গড়ে সাড়ে তিনশো যাত্রী। গুজরাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরুলিয়ায় যে ট্রেনটি এসে পৌঁছয়, তাতে ছিলেন ৭১ জন যাত্রী। ওই ট্রেনেই বাঁকুড়ায় নামেন ১০৮ জন। বৃহস্পতিবার মাঝ রাতের মধ্যে রামপুরহাট স্টেশন ছুঁয়ে যাওয়ার কথা ২৬টি ট্রেনের। তার মধ্যে মহারাষ্ট্রের ট্রেন ২০টি।