তুষারপাতে পর্যটনে লাভের আশায় পাহাড় 

বরফ পড়তে শুরু করেছে শুনে দক্ষিণবঙ্গের পর্যটকদের মধ্যে হঠাৎই উৎসাহ বেড়েছে। এদিনই কলকাতা থেকে কিছু পর্যটক দার্জিলিং মেল এবং পদাতিকে হাজির হয়েছিলেন এনজেপিতে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন 

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৭
Share:

শীতের দাপট অব্যাহত এখনও। রবিবার বিকেলে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় ফের বরফ পড়ল দার্জিলিংয়ের বেশ কয়েকটি জায়গায়। একইসঙ্গে এদিনই সিকিমে এবং দার্জিলিংয়ের কয়েকটি জায়গায় কিছু ক্ষণ শিলাবৃষ্টিও হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আজ সোমবারও এই পরিস্থিতি বজায় থাকবে। উষ্ণ আবহাওয়ার ছোঁয়া পেতে পেতে মঙ্গলবার বিকেল হয়ে যাবে। তবে মাঝখানে একটি বিরতি টেনে আবার ৮ জানুয়ারি থেকে সিকিম এবং উত্তরবঙ্গে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে আগামী কয়েক দিন বাড়তে পারে ব্যাপক কুয়াশা।

Advertisement

পর পর দু’দিন তুষারপাতের সাক্ষী রইল পাহাড়, যার পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিলেন আবহাওয়াবিদরা।

এ দিন দার্জিলিং শহরে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। তবে সন্ধ্যের পর বৃষ্টি কিছুটা ধরে। শনিবারের চেয়ে এদিন ঠান্ডার অনুভূতি কিছুটা বেশি ছিল। বিকেল পাঁচটার পরেই ম্যাল লাগোয়া কয়েকটি দোকান বন্ধ হয়ে যায়।

Advertisement

বিকেলের পর পাহাড়ে জোড়বাংলোর কিছু অংশে, ঘুম, টাইগারহিলে হালকা তুষারপাত ছাড়াও কয়েকটি জায়গায় কিছু ক্ষণ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা ছিল সিকিমের বেশ কিছু উচ্চ অক্ষাংশেও। ওদিকে, ইন্দো-নেপাল সীমান্তে মিরিকের সীমানা এলাকা এবং সান্দাকফুতে বরফ পড়ে। পেঁজা তুলোর মতো বরফবৃষ্টি উপভোগ করেন সিংহালিলা জাতীয় উদ্যান এলাকায় রিম্বিকে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরাও।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘সিকিম, দার্জিলিং ছাড়াও উত্তরবঙ্গে আবহাওয়া পরিস্থিতি সোমবারও প্রায় একই রকম থাকার কথা। তারপর থেকে কুয়াশা বাড়বে ক’দিন।’’ আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, গত কয়েকদিন থেকেই সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের উপর স্থিতিশীল রয়েছে একটি নিম্মচাপ অক্ষরেখা। তার সঙ্গে গত শুক্রবার রাত থেকেই তৈরি হয়েছে ঘুর্ণাবর্তও। তার জেরেই এই শিলাবৃষ্টি, বৃষ্টি এবং বরফ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তাঁরা।

বরফ পড়তে শুরু করেছে শুনে দক্ষিণবঙ্গের পর্যটকদের মধ্যে হঠাৎই উৎসাহ বেড়েছে। এদিনই কলকাতা থেকে কিছু পর্যটক দার্জিলিং মেল এবং পদাতিকে হাজির হয়েছিলেন এনজেপিতে। তাঁদের মধ্যে একজন সন্তোষপুরের বাসিন্দা তথা সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার উন্মেষ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বরফ পড়ছে শুনে সাধারণ কামরাতেই কষ্ট করে এলাম। দার্জিলিং যাব। বরফ যদি দেখতে পাই।’’ দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন জায়গায় বরফ পড়ার খবরে এই সময় কিছু বাড়তি পর্যটক যে বাড়তে পারে তারও ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন সূত্রে। তবে সিকিমের উচ্চ অক্ষাংশে আবহাওয়া ঘনঘন বদলাতে শুরু করেছে বলে তুষারপাতের ভয়েই নাথু লা, ছাঙ্গু, লাচেন, লাচুংয়ের মতো উচ্চ অক্ষাংশের পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে এ দিনও পর্যটকদের যাওয়া বন্ধ রেখেছিল সিকিম প্রশাসন। সোমবার পরিস্থিতি বিচার করে অনুমতি দেওয়ার প্রশ্ন।

রবিবাসরীয় সকালে মেঘলা আবহাওয়া ও উত্তুরে হাওয়াতে জবুথবু অবস্থাতে কাটল ডুয়ার্সেরও। কার্যত সপ্তাহের একমাত্র ছুটির দিনে প্রবল শীতের দাপটেই হাট, বাজারও জমল না। মালবাজার মহকুমার বাইরে কালিম্পং মহকুমার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি পর্যটন কেন্দ্র, লাভা, সামসিং, ঝালং, বিন্দুতেও কালো মেঘের দাপটে দিনেই অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। উল্লেখ্য, গত ২০১১ সালের পর গত বছরেই ফের লাভা থেকে রিশপ জুড়ে বরফ পড়েছিল। এ দিন আবহাওয়া দেখে তাই ফের বরফ পড়ার আবহ রচনা হয়ে গিয়েছে বলেই দাবি করেন লাভার অভিজ্ঞ পর্যটন ব্যবসায়ীরা। বরফ পরলে সেই বরফ দেখতে পর্যটকদের ভিড় যে উপচে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য। তাই ঠান্ডা যখন প্রবল পড়েই গিয়েছে, তখন যেন বরফকুচিও আকাশ থেকে নেমে আসে সেই কামনাই করছেন সকলে।

ডুয়ার্স ও পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকেরাও এই আবহাওয়াতে বরফের আশাতেই বুক বাঁধতে শুরু করেছেন। কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে লাভাতে সপরিবারে বেড়াতে এসেছেন সুমন্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “লাভাতে এসেই যে ভাবে শীতের মুখে পড়েছি তাতে আমাদের যাবতীয় শীতবস্ত্র ব্যবহার করেও যেন নিস্তার পাচ্ছি না। এবারে এখানেও বরফটা পড়লেই ষোলো আনা তৃপ্তি নিয়ে ফিরতে পারব।” শুধু পর্যটকেরাই নন মালবাজারে কর্মরত অনেক আধিকারিকরাও ঘন ঘন লাভায় পরিচিত হোটেল ব্যবসায়ীদের ফোনে ধরছেন। মালবাজার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রিয়াংকু জানা বলেন, “আমার মেদিনীপুরে বাড়ি। উত্তরে চাকরি করতে এসে বরফ দেখার সাধ আমার বহুদিনের। বরফ পড়লেই যাতে লাভা যেতে পারি তাই ঘনঘন ফোন করে চলেছি।”

তথ্য সহায়তা: শান্তশ্রী মজুমদার, রচনা মজুমদার ও সব্যসাচী ঘোষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement