হারানো যাত্রাপালা থিম কলকাতার রবীন্দ্র সরণির পাঁচের পল্লির দুর্গাপুজোয়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
কলকাতার রোজকার যাপন এবং জীবনের সঙ্গে যোগ থেকে উঠে আসা পুজোকে কুর্নিশ করছে গোটা বিশ্ব। তবু সব শর্ত মেনে এত দিনের পরিশ্রমের পরেও পুরস্কারের ঝুলিতে প্রাপ্তিযোগ শূন্য। মহালয়ার আগে থেকে শুরু হওয়া উন্মাদনা তাই মুখ থুবড়ে পড়েছে ষষ্ঠীর দুপুরেই। শনিবার, বোধন শেষে উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার গলির মণ্ডপের আবহ ছিল তেমনই।
সাবেক চিৎপুর রোড লাগোয়া মণ্ডপ এ বার চিৎপুরের যাত্রাপাড়ার হালহকিকতকেই মণ্ডপে মেলে ধরেছে। পাথুরিয়াঘাটার ওই গলির মুখে এখনও ভেসে উঠছে অকালমৃত মোহন অপেরার স্মৃতি। পুজোর ষষ্ঠী থেকে জষ্টি মাস পর্যন্ত তা সরগরম থাকত গাঁয়েগঞ্জে পালার প্রস্তুতিতে। চিৎপুর তল্লাটে আশপাশে বিভিন্ন যাত্রা কোম্পানির শবদেহ বা রুগ্ণ চেহারা।
মোহন অপেরার বন্ধ অফিসঘরের পাশেই যাত্রার সোনালি দিন কিন্তু উস্কে দিচ্ছে পাঁচের পল্লিতে গৌরাঙ্গ কুইল্যার মণ্ডপ। মণ্ডপের চাঁদোয়ায় মিশে যাত্রার রকমারি পোস্টার। সাজসজ্জা থেকে প্রতিমা পর্যন্ত যাত্রাপালার মাইক, চোঙা, আলোর সরঞ্জামে গড়ে ওঠা। কাছাকাছি গেলেই বুকের মধ্যে নিঃশব্দে অর্গানের সুর বেজে ওঠে।
এই মণ্ডপের পিছনেই ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলোরা সাহারও অফিসঘর। এ দিন দুপুরে সক্ষোভে ইলোরা বলছিলেন, “এইটুকু গলিতে সব নিয়ম মেনে পুজো করেও কিছু পেলাম না। বিচারকেরা খুব ভাল বলে গেলেন। ব্যস, ওইটুকুই! যা শুনছি, বিশ্ববাংলার কার্নিভালেও আমরা নেই। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে থিম করা ছোট পুজোর কপালে কিছুই নেই!” মালাপাড়া হয়ে বড়বাজারে ঢোকার রাস্তায় পুজোর থিম মূলত ওয়ার্কশপে তৈরি হয়েছে। চতুর্থী পর্যন্ত রাস্তার একাংশে গাড়ি চলেছে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। ইলোরার কথায়, “ছ’মাস ধরে মণ্ডপ গড়া বড় পুজো ভাল করেছে। কিন্তু আমাদের চেষ্টা যৎসামান্য স্বীকৃতিও পাবে না।”
দক্ষিণ কলকাতার বকুলবাগান বা সমাজসেবীর কাজ নিয়েও এ বছর হইচই হয়েছিল, কিন্তু বড়সড় পুরস্কার মেলেনি। প্রতিযোগিতায় ব্যর্থদের তালিকায় শিবমন্দিরও। পুজোকর্তা পার্থ ঘোষ বলছেন, “কোটি টাকার মণ্ডপের সঙ্গে আমাদের থিমের লড়াইটা বড্ড অসম হয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা এত বছরে একটা ব্র্যান্ড তৈরি করেছি। এটাই ভরসা! এ বার হল না, পরের বছর চেষ্টা করতে হবে।এটাই পুজো স্পিরিট।”