শিশির ও দিব্যেন্দু। —ফাইল চিত্র।
এখনও তৃণমূলেই আছেন তাঁরা। অথচ নেই তৃণমূলের শহিদ দিবসের বার্ষিক সমাবেশে। তাঁরা তৃণমূলের দুই পিতা-পুত্র সাংসদ শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূলের জনসমাবেশ। দু’বছর পর রাজ্যের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা প্রায় সকলেই ধর্মতলামুখী। ব্যতিক্রম কাঁথির অধিকারী পরিবারের দুই তৃণমূল সাংসদ।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নয়াদিল্লি গিয়ে ভোট দিয়ে দক্ষিণ কাঁথির বাড়িতে ফিরে এসেছেন অশীতিপর শিশির। বাড়িতে বসেই দিল্লির রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফলে চোখ রাখছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বোঝাতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাবেশ নিয়ে বিশেষ কোনও আগ্রহ নেই তাঁর। আগ্রহ নেই ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ নিয়েও।
২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিতে আসেননি কেন? বৃহস্পতিবার এই প্রশ্নের জবাবে শিশির বলেন, ‘‘আমি ছোটখাটো মানুষ। কলকাতায় আমার কী কাজ যে যাব!’’ বছর তিনেক আগে পর্যন্তও কমবেশি অধিকারী পরিবারের সব সদস্যই ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ আয়োজনের তদারকির দায়িত্বে থাকতেন। এমনকি, বক্তাদের তালিকাতেও জ্বলজ্বল করত শুভেন্দু অধিকারী বা শিশির অধিকারীর নাম। এখন বিজেপিতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হয়েছেন শুভেন্দু।
২১ জুলাইয়ের সভায় শুভেন্দু শেষ বক্তৃতা করেছিলেন ২০১৯ সালে। ঘটনাচক্রে, সেই বক্তৃতায় শুভেন্দু বিজেপি নেতাদের ‘বাহারি’ (বহিরাগত) বলে আক্রমণ করেছিলেন। তৃণমূলের মুখপাত্র তথা সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ তাঁর সেই বক্তৃতাটি তীব্র কটাক্ষ-সহ নেটমাধ্যমে দিয়েছেন। যা বিজেপিকে ‘বিড়ম্বনা’য় ফেলতে পারে।
শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে অধিকারী পরিবারের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কে দূরত্ব রচিত হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুভেন্দু বিজেপি যোগদানের পরেই শিশিরকে সরানো হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে। সেই থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্বের সূত্রপাত অধিকারীদের। ১ মার্চ এগরায় অমিত শাহের সভামঞ্চে শিশিরের যোগদানে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার ষোলকলা পূর্ণ হয়। বিধানসভা ভোটে বিজেপি পর্যুদস্ত হওয়ার পর শিশিরের সাংসদ পদ খারিজের আবেদন জানিয়ে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে আবেদনও করেছে তৃণমূল।
স্বভাবতই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শিশির-দিব্যেন্দুর কাছে কোনও বার্তা পাঠাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দুই সাংসদও কলকাতার বদলে দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিয়ে এসেছেন। বৃহস্পতিবার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের পর বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কালীঘাটের বাসভবনে সাংসদদের বৈঠকেও প্রত্যাশিত ভাবেই আমন্ত্রিত নন তাঁরা। প্রসঙ্গত, সেই বৈঠকেই ঠিক হবে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের অবস্থান। সে প্রসঙ্গে শিশির বলেন, ‘‘আমার কাছে রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে কোনও নির্দেশ আসেনি।’’ সূত্রের খবর, নির্দেশ যায়নি দিব্যেন্দুর কাছেও। তাঁকেও ধর্মতলার সমাবেশে দেখা যায়নি।