শিলিগুড়ির মেয়র তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম তৃণমূল নেতা গৌতম দেব। ছবি সংগৃহীত
এ যেন রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন।
উত্তরবঙ্গের সব জেলা মিলিয়ে প্রায় পৌনে ছ’হাজার পুজো কমিটি থেকে আটাশ হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি, বণিকসভা ও অন্য আমন্ত্রিতদের তার সঙ্গে যোগ করলে সংখ্যাটা তিরিশ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। আগামী বুধবার, ১৯ অক্টোবর শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের বিজয়া সম্মিলনীতে অতিথির সংখ্যা এমনই চমকে দেওয়ার মতো। যার জন্য শিলিগুড়ির কাওয়াখালির মাঠে তৈরি হচ্ছে শামিয়ানা। শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এমন বিজয়া সম্মিলনী কোভিড-পর্বের আগেও হয়েছে। কিন্তু যেখানে আর্থিক সঙ্কটের কথা বার বার শোনা যায় রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে, সেখানে এই আয়োজন এখন কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
কোনও জেলা প্রশাসনের কর্তা মুখ খোলেননি। তবে শিলিগুড়ির মেয়র তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম তৃণমূল নেতা গৌতম দেবের মন্তব্য, ‘‘বাম সরকারের দেনা রয়েছে। কেন্দ্র বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। তার পরেও আনন্দ-উৎসব থাকবে। বিষাদও থাকবে। এটা বাংলার সংস্কৃতির অঙ্গ। তা নিয়েও যদি বিরোধীরা বলেন, তবে কিছু বলার নেই।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, অনুমোদিত পুজোগুলি থেকে পাঁচ জন করে অনুষ্ঠানে যেতে বলা হয়েছে। কোনও কোনও জেলায় পুলিশকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কমিটি প্রতি পাঁচ জনের নাম সংগ্রহ করে অ্যাডিশনাল এসপি-কে পাঠাতে। পুজো কমিটির সদস্যদের বাস ভাড়া করে শিলিগুড়ি যাতায়াত করাতে (সরকারি বাস নেওয়া হবে কি না চূড়ান্ত নয়) এবং পথে টিফিন দিতেই খরচ হতে পারে কোটি টাকার বেশি। শামিয়ানা তৈরি এবং সকলকে ‘মিষ্টি মুখ’ করানোর খরচ দাঁড়াতে পারে ৬০-৭০ লাখে। সরকারি হিসাবে, সব মিলিয়ে প্রায় ৬৩৯টি বাস পৌঁছবে শিলিগুড়িতে। সরকারি সূত্রের দাবি, উত্তরবঙ্গের কোনও জেলায় আলাদা বিজয়া সম্মিলনী বাবদ প্রশাসনের তরফে টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে না। জেলা প্রশাসন বাস ভাড়া করে দিচ্ছে। পুজো কমিটির সদস্যদের জল এবং টিফিনের ব্যবস্থা কোথাও পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের তরফে করা হচ্ছে।
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “খরচ করে বিজয়ার নামে নির্বাচনী সম্মেলন হচ্ছে। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। পুলিশ, প্রশাসনকে ডেকে দলের যাঁরা প্রার্থী হবেন, তাঁদের নিয়ে বার্তা দেওয়া হবে।” জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়ের মন্তব্য, “ভার্চুয়াল সম্মেলন হলে, রাজ্যের কোষাগারের টাকা কিছু বাঁচত।” জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি মহুয়া গোপের পাল্টা দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মালবাজার যাচ্ছেন। তাঁর মানবিক মুখ দেখে ভয় পেয়েছে বিরোধীরা, তাই খরচ নিয়ে অবান্তর রাজনীতি করছে।’’