প্রতীকী ছবি।
খুব সন্তর্পণে, পায়ের শব্দ না-করে আসছে সে। করোনা রোগীর ক্ষেত্রে সেই ‘সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া’ বা ‘নিঃশব্দ বিপদ’ চিহ্নিত করতে রোগীর পায়ের উপরেই নির্ভর করার কথা ভাবা হচ্ছে। সেই জন্য রাজ্যের কোভিড কেস ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত নির্দেশিকায় ছ’মিনিট হাঁটার পরীক্ষা চিকিৎসা পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়ার আভাস পেতে ইতিমধ্যে হাঁটার পরীক্ষাকে মান্যতা দিয়েছে মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দফতর। এ বার বঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরও সেই পথে হাঁটতে পারে বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে।
চিকিৎসকদের একাংশ জানান, করোনায় যে-ধরনের শারীরিক পরিস্থিতি রোগীকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, ‘সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া’ তার অন্যতম। দেখা যাচ্ছে, রোগীর শ্বাসকষ্টের কোনও উপসর্গ নেই। অথচ চুপিসারে দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে সুস্থ রোগীকে হঠাৎ হঠাৎ আশঙ্কাজনক করে তুলছে।
এ রাজ্যে ৮০ শতাংশ আক্রান্তই ‘হোম আইসোলেশন’ বা ‘সেফ হোমে’ রয়েছেন। সেই সব রোগীর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা চুপিসারে কমছে কি না, তা চিহ্নিত করতে ছ’মিনিটের হাঁটার পরীক্ষাকে কোভিড চিকিৎসার রূপরেখায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। রবিবার স্বাস্থ্য দফতর আয়োজিত ওয়েবিনারে এই ইঙ্গিত মিলেছে।
আরও পড়ুন: টানা এক সপ্তাহ পর কমল সুস্থতা, রাজ্যে ফের ৩ হাজারের বেশি নতুন সংক্রমণ
ছ’মিনিটের হাঁটার পরীক্ষাটি কেমন? আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিনের অধ্যাপক জ্যোতির্ময় পাল জানান, হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের অসুস্থতা বাড়ছে কি না, তা দ্রুত চিহ্নিত করা জরুরি। সেই জন্য পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা মেপে রোগীকে ছ’মিনিট হাঁটতে বলা হয়। ৩৬০ সেকেন্ড হাঁটার পরে দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে বুঝতে হবে, রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার। রাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘‘কো-মর্বিডিটি রয়েছে, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে তিন মিনিট, নইলে ছ’মিনিট হাঁটিয়ে দেহে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক কতটা, তা বোঝা সম্ভব।’’
আরও পড়ুন: করোনায় আবার রেকর্ড, আক্রান্ত পেরোল ৪২ লাখ
অ্যাপোলো গ্লেনেগলসের পালমোনোলজিস্ট সুস্মিতা রায়চৌধুরী জানান, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, রোগী বিশ্রামে থাকাকালীন তাঁর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু হাঁটার পরে অক্সিজেনের মাত্রা যাচ্ছে কমে। অসুখ যে বাড়ছে, তা বোঝার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি উপকারী। তবে তা দেখার জন্য যে এক বারেই ছ’মিনিট ধরে রোগীকে হাঁটাতে হবে, তার কোনও মানে নেই।’’
রাজ্যের করোনা বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষও মনে করেন, ছ’মিনিট হাঁটানোর পরীক্ষা পদ্ধতির বাস্তবসম্মত প্রয়োগ জরুরি। এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান জানান, বাড়িতে বা সেফ হোমে যাঁরা আছেন, তাঁরা সরাসরি কোনও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকছেন না। এমন হতেই পারে যে, ছ’মিনিট হাঁটতে গিয়ে রোগীর শারীরিক সমস্যা হল। সেই সময় চিকিৎসক যে-হেতু ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত, তাই এই পরীক্ষা পদ্ধতির বাস্তবসম্মত প্রয়োগ জরুরি। তাঁর কথায়, ‘‘নিভৃতবাসে তত্ত্বাবধানের জন্য লোক থাকলেও স্নান, নিজের বাসন ধোয়ার মতো স্বাভাবিক কিছু কাজকর্ম রোগীকে করতেই হয়। তার আগে পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা মেপে নিলে একই পরীক্ষা পদ্ধতির প্রয়োগ অনেক সহজে হয়। এমন কিছু ভাবতে হবে, যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পক্ষে মানানসই হবে এবং রোগীর কোনও রকম বিপদ ডেকে আনবে না।’’