Minakshi Mukherjee

ব্রিগেডের পর সিপিএমের মধ্যে ধন্দমূলক মিনাক্ষীবাদ, লোকসভায় প্রার্থী করা হবে কি পলিকে? দোলাচলে দল

ইতিমধ্যে মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় এক বার ভোটে হেরে গিয়েছেন। গত বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তাঁকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী করেছিল সিপিএম। তৃতীয় স্থানে ছিলেন মিনাক্ষী।

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৫
Share:

মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। —অলঙ্করণ: সনৎ সিংহ।

বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁকে ঘিরে উদ্বেলিত হচ্ছিল বামজনতা। কিন্তু আমজনতা? তারা কি তাঁকে নিয়ে ততটাই উচ্ছ্বসিত হবে? আপাতত এই ধন্দেই রয়েছে সিপিএম।

Advertisement

তিনি— মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। ৫০ দিনের ‘ইনসাফ যাত্রা’য় তাঁকে নিয়ে বামজনতার উচ্ছ্বাস অন্যমাত্রায় পৌঁছেছিল। তার পরে গত রবিবারের ব্রিগেড সমাবেশ কার্যত সিলমোহর দিয়ে দিয়েছে এই তত্ত্বে যে, মিনাক্ষীই এখন সিপিএমের ‘মুখ’। এ নিয়ে সিপিএমের অন্দরেও বিশেষ দ্বন্দ্ব নেই। তবে ব্রিগেডের পর ধন্দ একটা তৈরি হয়েছে বটে। মিনাক্ষীকে কি আসন্ন লোকসভা ভোটে প্রার্থী করা উচিত? না কি নয়?

এই বিষয়ে দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এমনিতেই সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বার লোকসভা নির্বাচনে কিছু আসনকে ‘ফোকাস’ করে লড়বে। যেখানে ক্ষীণ হলেও নানা সমীকরণে ইতিবাচক ফলাফলের আশা রয়েছে। দলের একটি অংশের বক্তব্য, এমন কোনও আসন থেকে মিনাক্ষীকে প্রার্থী করা হোক। তাতে সেই আসনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। আবার দলের একটি বড় অংশের বক্তব্য, মিনাক্ষীকে কখনওই লোকসভায় প্রার্থী করা উচিত নয়। বরং তাঁকে গোটা রাজ্যে প্রচারে ব্যবহার করা উচিত। কারণ, সারা রাজ্যে এমন একটিও আসন নেই, যেখানে চোখ বুজে সিপিএমের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভোটে দাঁড় করানোর পর হেরে গেলে মিনাক্ষী সম্পর্কে যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে, তাঁকে ঘিরে বামজনতার মনে যে জ্যোতির্বলয় তৈরি হয়েছে, তা ভেঙে যেতে পারে।

Advertisement

ইতিমধ্যেই মিনাক্ষী এক বার ভোটে হেরে গিয়েছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে তাঁকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী করেছিল সিপিএম। সেখানে মিনাক্ষীর জামানত জব্দ হয়ে গিয়েছিল। তিনি তৃতীয় হয়েছিলেন। তবে তার পরেও আন্দোলনে থেকেছেন মিনাক্ষী। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘নন্দীগ্রাম মিনাক্ষীকে যতটা না প্রচার দিয়েছিল, তার চেয়েও বেশি ওঁর লড়াই, আন্দোলন, জেলে যাওয়া এবং এই ২৯১০ কিলোমিটার হাঁটা ওঁকে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।’’

মিনাক্ষীকে আদৌ প্রার্থী করা হলে কোথায় করা হবে? তাঁর বাড়ি কুলটিতে। অনেকে চান, তাঁকে আসানসোলে প্রার্থী করা হোক। কেউ কেউ আবার বর্ধমান দুর্গাপুর আসনে তাঁকে প্রার্থী করার পক্ষে ঘরোয়া আলোচনায় মতামত দিচ্ছেন। তবে যাঁরা প্রার্থী করতে চান, তাঁদের অনেকে আবার মুর্শিদাবাদ আসনে মিনাক্ষীকে লড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। প্রসঙ্গত, সিপিএমের ‘নজরে’ যে ক’টি আসন রয়েছে, তার মধ্যে মুর্শিদাবাদ অন্যতম। তবে বেশির ভাগ নেতাই চান মিনাক্ষীকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী না করতে। যদিও প্রকাশ্যে এ নিয়ে কেউই কোনও মন্তব্য করছেন না। মিনাক্ষী-ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এ সব ব্যাপারে মিনাক্ষী দলের অনুগত। দল যা বলবে, তিনি তা-ই করবেন।’’

মিনাক্ষীকে প্রার্থী করার বিপক্ষে যাঁরা, তাঁদেরও যুক্তি রয়েছে। সেই অংশের বক্তব্য, মিনাক্ষীকে একটি কেন্দ্রে প্রার্থী করা মানে সেখানেই তাঁকে ‘বোতলবন্দি’ করে দেওয়া। বরং ওঁর ‘মুখ’কে সারা রাজ্যের প্রচারে কাজে লাগানো উচিত। সিপিএমের এক যুবনেতার কথায়, ‘‘মিনাক্ষী অসম্ভব পরিশ্রম করতে পারেন। যে আসনে পার্টি সম্ভাবনা দেখছে, দরকারে সেখানে পাড়ায় পাড়ায় মিনাক্ষীকে নিয়ে গিয়ে প্রচার করানো যেতে পারে। কিন্তু প্রার্থী করা উচিত হবে না। তা হলে আরও একটা ঐতিহাসিক ভুল হবে। ন্যূনতম দূরদর্শিতা থাকলে পার্টি তা করবে না।’’ পলিকে (মিনাক্ষীর ডাকনাম) প্রার্থী করার বিপক্ষবাদী এক প্রবীণ নেতা আবার অন্য একটি প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও কংগ্রেস কী করবে তা স্পষ্ট নয়। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে যদি মজবুত বোঝাপড়া হয়, তা হলে দু’একটি আসনে রুপোলি রেখা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বুঝে এবং অঙ্ক কষে মিনাক্ষীকে প্রার্থী করা গেলেও যেতে পারে। তবে তাতেও ঝুঁকি থাকবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement