বসিরহাটে আঁধারে আলো

সব সারাই হোক, তখন ঝাঁপ খুলব

এত ক্ষতি সামলাবেন কী করে? ব্যবসায়ীরা জানালেন, প্রশাসনের ভরসায় না থেকে আপাতত চাঁদা তুলছেন তাঁরাই। সাহায্য আসছে অন্য কিছু সংগঠনের কাছ থেকেও।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৭ ০৪:২৫
Share:

পাশে-আছি: দোকান তৈরির জন্য টাকা তুলছেন ব্যবসায়ীরা। নিজস্ব চিত্র

রাস্তার দু’পাশে সারি সারি দোকান। তারই মাঝে মাঝে কোনওটা পুড়ে খাক। কোনওটা ভাঙচুর, লুঠপাটের ফলে হতশ্রী চেহারায় পড়ে। কোনওটার সাইন বোর্ড উপড়ে ফেলা হয়েছে। কোথাও দোকানের টিনের চাল দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে।

Advertisement

সে সব দোকান বন্ধ। কিন্তু যে দোকানগুলির ক্ষতি করেনি হামলাকারীরা, সেগুলি খুলতেই পারত। গত কয়েক দিনে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বসিরহাট শহরে। কিন্তু পাইকপাড়ার ব্যবসায়ী সমিতি জানিয়ে দিয়েছে, যতক্ষণ না সব দোকানে ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করা যাবে, একটা দোকানও খোলা হবে না।

এত ক্ষতি সামলাবেন কী করে? ব্যবসায়ীরা জানালেন, প্রশাসনের ভরসায় না থেকে আপাতত চাঁদা তুলছেন তাঁরাই। সাহায্য আসছে অন্য কিছু সংগঠনের কাছ থেকেও। ‘পাইকপাড়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও আরজি পার্টি’র সহ সম্পাদক মুস্তাফা মণ্ডল বলেন, ‘‘বছরের পর বছর আমরা সব ধর্মের মানুষ এখানে পাশাপাশি ব্যবসা করছি। আজ যখন কিছু মানুষের দোকানের এই হাল, তখন বাকিরা পাশাপাশি ব্যবসা চালাব কোন মুখে?’’ তিনি জানান, সকলে মিলে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Advertisement

বাপি বিশ্বাস, স্বপন বিশ্বাস, সাজাহান মণ্ডল, আকবর আলি মণ্ডলদের দোকান ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। ওয়াজেদ আলি মণ্ডল, বাবর আলি মণ্ডলরা বলেন, ‘‘আশপাশে গোলমাল ছড়িয়েছিল। কিন্তু তার জেরে আমাদের এখানে এই হাল হবে ভাবতে পারিনি। হঠাৎ কিছু বহিরাগত লোক এসে বেছে বেছে কিছু দোকানে ভাঙচুর, লুঠপাট চালিয়ে চলে গেল। কিছু দোকানে আগুনও ধরিয়ে দেয় ওরা। এ আমাদের সকলের লজ্জা।’’

এই পাইকপাড়াতেই গোলমালের মাঝে পড়ে জখম হয়েছিলেন এসডিপিও। পাইকপাড়াতেই দুষ্কৃতী হামলায় মারা গিয়েছেন কার্তিক ঘোষ। বাজার সমিতির সহ সম্পাদক মুস্তাফা বলেন, ‘‘খুবই সজ্জন মানুষ ছিলেন। ওঁর এ ভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ব্যক্তিগত ভাবে মনে হচ্ছে, যেন অভিভাবককে হারিয়েছি।’’

ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সত্যেন বিশ্বাস বলেন, ‘‘সমস্ত দোকান সারাই না হওয়া পর্যন্ত বাকিরা কেউ ব্যবসা শুরু করবেন না বলে সকলে মিলে এক সঙ্গে বসে ঠিক করা হয়েছে।’’ সেই মতো টাকার জোগাড়ে নেমেছে ব্যবসায়ী সমিতি। চাঁদা তোলা হচ্ছে গ্রাম ঘুরে। সাহায্য এসেছে স্থানীয় একটি অনাথ আশ্রম থেকেও। ‘সিদ্দিকিয়া বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা ও এতিমখানা’র পরিচালন কমিটির সহ সম্পাদক আবদুল লতিফ মণ্ডল জানালেন, কার্যত চাঁদা তুলেই চলে তাঁদের সংস্থা। অনাথ বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়া, পড়ার খরচ, কিংবা পোশাকের জন্য সব সম্প্রদায়ের মানুষ দরাজ হাতে দান করেন। এলাকার মানুষের এমন বিপদের দিনে এতিমখানার তরফেও ৩০ হাজার টাকা সাহায্যের জন্য তুলে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার এলাকায় প্রশাসনের তরফে শান্তি বৈঠকেরও আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে এসেছিলেন বসিরহাটের এসডিপিও, আইসি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপাররা। সকলেই স্থানীয়দের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘‘র‌্যাফ যাওয়ার পরেই বাইরের কিছু লোক ঢুকে অশান্তি বাধিয়েছিল। এলাকার সকলে যে ভাবে আমাদের পাশে থাকছেন, তাতে আমরা অভিভূত। নিশ্চিন্তও বোধ করছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement