তৃণমূল সূত্রে প্রাপ্ত কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ৭ ফেব্রুয়ারির নির্দেশের প্রতিলিপির অংশ বিশেষ। তৃণমূলের তরফেই হলুদ ও লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের শেখ শাহজাহান সংক্রান্ত নির্দেশ এবং প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের পরে শাসক তৃণমূল ফের দাবি করল, আদালতের কারণেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারেনি রাজ্য পুলিশ। ‘জট’ কেটেছে। সাত দিনের মধ্যে শাহাজাহান গ্রেফতার হবেন।
গত বুধবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, শাহজাহানের গ্রেফতারির ক্ষেত্রে ‘অন্তরায়’ আদালত। কোর্টই পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। তার পরে রবিবার মহেশতলায় গিয়েও সেই কথাই বলেছিলেন অভিষেক। অতঃপর সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেন, ‘‘স্পষ্ট ভাবে বলছি, পুলিশকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ইডির মামলায় সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। আমরা পুলিশকে বলিনি যে, গ্রেফতার করা যাবে না।’’
তার পরেই পুরনো নির্দেশ দেখিয়ে তৃণমূল দাবি করেছে, আগের রায়ে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছিল আদালত। তাই শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যায়নি।
সোমবার তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘আদালতের ব্যাপারে সাধারণত কেউ কিছু বলেন না। অপ্রিয় প্রশ্নটা তুলেছিলেন অভিষেক। তিনি বলার পরেই আদালতকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। তাই মামলা নির্ধারিত না থাকলেও স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সোমবার মামলাটি ওঠে।’’ তৃণমূল পুরনো রায়ের ৭ এবং ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ দেখিয়ে দাবি করছে, আদালত স্পষ্টই বলেছিল, রাজ্য পুলিশকে ‘সংযত’ থাকতে হবে। তারা কোনও ‘প্রক্রিয়া’ করতে পারবে না।
সোমবার আদালত বিষয়টি স্পষ্ট করার পরেই সন্দেশখালি থানায় শাহজাহানের নামে পৃথক এফআইআর দায়ের হয়েছে পুলিশের তরফে। তার পরে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে কুণাল লিখেছেন, ‘‘আদালতের আইনি জটেই বিষয়টি আটকে ছিল। তার সুযোগে রাজনীতি করছিল বিরোধীরা। আজ হাইকোর্ট সেই জট খুলে পুলিশকে পদক্ষেপে অনুমোদন দেওয়ায় ধন্যবাদ। সাত দিনের মধ্যে শাহজাহান গ্রেফতার হবেন।’’
অভিষেক গত বুধবার অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। ইডি তাঁকে ধরতে পারেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গিয়ে রাজ্য পুলিশের ওই এফআইআরের বিরুদ্ধে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। ফলে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে আদালতই।’’ শাহজাহানকে গ্রেফতারের বিষয়ে অভিষেক সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের উল্লেখও করেছিলেন অভিষেক। তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ বলেছিলেন, ‘‘সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনকে কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করে এনেছিল এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধেও দল, সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। সন্দেশখালির দুই অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দারকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তা হলে শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারবে না কেন?’’ প্রসঙ্গত, সন্দেসখালির আরও এক অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা অজিত মাইতিকেও সোমবার সকালে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার এলাকার গণরোষের মুখে পড়েছিলেন অজিত। তিনি এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করেন। পুলিশই তাঁকে উদ্ধার করে আটক করেছিল।
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম জানান, আদালত পুলিশকে শাহজাহানের গ্রেফতারির উপর কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। তার পরেই ময়দানে নামে তৃণমূল। তারা গত ৭ ফেব্রুয়ারির আদালতের নির্দেশ (প্রধান বিচারপতিরই জারি করা) দেখিয়ে সমাজমাধ্যমে জানায়, কলকাতা হাইকোর্ট শাহজাহানের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ‘সিট’ গঠনে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। নির্দেশের একটি প্রতিলিপিও তারা সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করে। যাতে সংশ্লিষ্ট অংশটি হলুদ এবং লাল রঙের কালিতে ‘চিহ্নিত’ করে দেওয়া হয়েছে।