শকুন্তলা শবর। নিজস্ব চিত্র
শবর পরিবারে বাবা দিনমজুর। মা জঙ্গলে কাঠ কুড়োন। সে পরিবারের মেয়ে পুরুলিয়ার বরাবাজারের শকুন্তলা শবর স্নাতক হলেন প্রথম শ্রেণিতে।
খেড়িয়া শবর জনজাতির মেয়েদের মধ্যে গত বছর প্রথম কলেজ উত্তীর্ণ হয়েছিলেন রমনিতা শবর। রমনিতার গ্রাম ফুলঝোরেরই আদি বাসিন্দা শকুন্তলা ঝাড়খণ্ডের কোলহান বিশ্ববিদ্যালয়ের পটমদা কলেজ থেকে ৬২ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন হিন্দি অনার্সে। বুধবার শকুন্তলা বলেন, ‘‘আমি আরও পড়তে চাই।’’
‘পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি’র কর্তা প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, ‘‘শবর মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনা চালানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। খুব ভাল লক্ষণ। শকুন্তলা পুরুলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়তে চাইলে, সমিতির তরফে সব রকম সহযোগিতা করব।’’
শকুন্তলার বাবা মঙ্গল শবর দিনমজুরি ও মা ঊর্মিলা জঙ্গলের কাঠ সংগ্রহ করেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শকুন্তলাই বড়। তিনি জানান, ঝাড়খণ্ডের চান্ডিলে মাসির বাড়িতে থেকে স্কুলে পড়েছেন। পরে পটমদা কলেজে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। তাঁর ভাই-বোনেরা এখন স্কুল-কলেজে পড়ছে।
শকুন্তলার মামা মিহির শবরের দাবি, এক সময়ে ভাগ্নে-ভাগ্নিদের পড়াশোনার খরচের জন্য অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি। শেষে পুরুলিয়ার পুঞ্চার বাসিন্দা, কলকাতা পুলিশে কর্মরত অরূপ মুখোপাধ্যায় পাশে দাঁড়ান। বিভিন্ন সময়ে তিনি শকুন্তলা ও তাঁর ভাই-বোনেদের ভর্তি এবং পরীক্ষার ফি দিয়ে সাহায্য করেছেন। অরূপ এ দিন বলেন, ‘‘শকুন্তলা ভাল ফল করেছে, এর থেকে বেশি খুশির খবর আর হয় না। ও আমার মান রেখেছে।’’
শকুন্তলার মা ঊর্মিলা জানান, রমনিতার সঙ্গেই পটমদা কলেজে পড়ছিলেন মেয়ে। অসুস্থতার জন্য এক বছর পড়তে পারেননি শকুন্তলা। না হলে তাঁরা এক সঙ্গেই পাশ করতেন। পুরুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পাঠরত রমনিতা বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে মেয়েদের মধ্যে পড়ার ঝোঁক বেড়েছে। দু’-এক বছরের মধ্যে আরও কয়েক জন স্নাতক হবে। শকুন্তলাকে পড়া চালিয়ে যেতে বলব।’’
গত মে মাসে ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলায় বিয়ে হয়েছে শকুন্তলার। বুধবার স্বামী শুকলাল শবরকে নিয়ে বাপের বাড়িতে আসেন তিনি। শুকলাল বলেন, ‘‘সংসারে অভাবের কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের পরে, আর পড়া চালাতে পারিনি। শকুন্তলা আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে। ও পড়াশোনা চালিয়ে যাক।’’