বাংলাদেশের ঘটনার প্রেক্ষিতে পথে সিপিএম। মুকুন্দপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগকে সামনে রেখে গত কয়েক দিনের মতো শনিবারও কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের কর্মসূচি নিয়েছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। সেই সঙ্গে, বঙ্গ বিজেপির নেতারা কেন দিল্লিতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রেক্ষিতে, পাল্টা ‘অনুপ্রবেশ ও সীমান্ত নিরাপত্তা’র বিষয়ে রাজ্যের ভূমিকাকে বিঁধেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।
তৃণমূল সাংসদ অভিষেক এ দিন আমতলায় বলেছেন, “বাংলাদেশে যা হচ্ছে, সেটা রাজনীতির বিষয় নয়। কিন্তু আর জি কর থেকে বাংলাদেশ, বিজেপি সব নিয়েই রাজনীতি করছে। বিজেপি নেতারা দিল্লিতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন না কেন?” সেই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেছেন, “কেন্দ্রের বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অবস্থানকে সমর্থন করবে তৃণমূল। তা না হলে তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাজ্যকে দেখতে বলুক।” এই পরিস্থিতিতে এ দিন যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডে একটি প্রতিবাদসভা থেকে শুভেন্দু বলেছেন, “তৃণমূল সরকার সীমান্তে ৭২ জায়গায় বেড়া দিতে দেয়নি। বিজেপি ক্ষমতায় এলে বেড়া দেবে। খুঁজে খুঁজে বাংলায় এক কোটি রোহিঙ্গাকে চুলের মুঠি ধরে ফেরত পাঠাবে।” এই সূত্রেই বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, “রোহিঙ্গারা বাংলায় এসে বস্তি তৈরি করে থাকছেন। উনি (অভিষেক) আগে বিধাননগর থেকে রোহিঙ্গাদের সরানোর ব্যবস্থা করুন।”
বাংলাদেশের ঘটনার প্রেক্ষিতে পথে সিপিএম। ভবানীপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে এ দিনও রাজ্য জুড়ে নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে। প্রস্তাবিত ওয়াকফ-বিলের বিরোধিতায় তৃণমূলের রানি রাসমণি রোডের সমাবেশে যোগ দিয়ে লোকসভায় দলের সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “যে কোনও দেশেই সংখ্যাগুরুদের উচিত সে দেশের সংখ্যালঘুদের আগলে রাখা। ওখানে (বাংলাদেশে) যেটা হচ্ছে, তা সমর্থন করি না।” এই সূত্রেই বাংলাদেশে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ ও সে দেশে ভারতের ‘জাতীয় পতাকার’ অবমাননার যে অভিযোগ উঠছে, তারও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। অন্য দিকে, ধর্ষণ রুখতে এ দিনই রাজ্যের ‘অপরাজিত বিলে’র প্রয়োজনীয় অনুমোদনের দাবিতে শহরে মিছিল করেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজারা।
বিজেপির সাংসদ, বিধায়কেরা এ দিনও রাজ্যের নানা জেলায় নিজেদের এলাকায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি করেন। ‘সনাতন পরিষদ’ নামে একটি সংগঠনের ডাকে বাঘাযতীন থেকে যাদবপুর ৮বি পর্যন্ত ও বারাসতে মিছিল হয়েছে। বাঘাযতীনের মিছিলে ছিলেন শুভেন্দু। তিনি বাংলাদেশকে যে ‘সার্বিক বয়কটে’র ডাক দিয়েছিলেন, এ দিন কার্যত সেই সূত্রে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও বক্তব্য, “আমরা চাল, ডাল পাঠানো বন্ধ করে দিলে তো খেতে পাবে না। হিন্দুদের উপরে নির্যাতন বন্ধ না হলে এ বার সীমান্ত অবরোধ করে সব আটকে দেব।”
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণের প্রতিবাদে এবং সে দেশে সব মানুষের অধিকারের সুরক্ষার দাবিতে উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা-সহ নানা জায়গায় পথে নেমেছিল সিপিএমের ছাত্র, যুব সংগঠনও। যাদবপুর, নৈহাটি, দমদম, বিরাটি, ভবানীপুর-সহ নানা জায়গাতেই প্রতিবাদ জানানো হয়। সিপিএমের যাদবপুর পূর্ব এরিয়া কমিটির ডাকে সন্ধ্যায় মুকুন্দপুর এলাকায় বাংলাদেশ নিয়ে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। সিপিএমের দাবি, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে। সেই সঙ্গে, এই ঘটনাকে সামনে রেখে এখানে যে ‘উস্কানিমূলক প্রচার’ চলছে, সেটাও বন্ধ করতে হবে।