Saline Controversy

‘বিধি ভাঙার’ উল্লেখ তদন্ত-রিপোর্টে, দাবি

পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব মেলেনি মোবাইল-বার্তার। সেই দিন অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত পাঁচ ‘পিজিটি’ কথা বলতে চাননি।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:১৭
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি-মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর শরীরে দেওয়া বিতর্কিত ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইন সন্দেহের তালিকার শীর্ষে রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, ওই ঘটনার পিছনে চিকিৎসকদের ‘গাফিলতি’ থাকার সম্ভাবনাও খারিজ করা যাচ্ছে না।

Advertisement

রবিবার দুপুরে স্বাস্থ্য ভবনে প্রসূতি-মৃত্যু নিয়ে তদন্তকারী দলের সদস্যদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্তাদের বৈঠক হয়। সূত্রের দাবি, তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ৮ জানুয়ারি রাতে হাসপাতালে পর-পর পাঁচ প্রসূতির অস্ত্রোপচার (সিজ়ার) করেছেন মেডিক্যালের স্নাতকোত্তরের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষানবিশ বা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি (পিজিটি) চিকিৎসকেরা। অস্ত্রোপচারের আগে, প্রসূতিদের অজ্ঞান করার জন্য অ্যানেসথেটিস্টও অপারেশন থিয়েটারে ছিলেন না। সেই কাজ করেন মেডিক্যালের স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের ‘পিজিটি’রা।

রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সৌমেন দাস নামে এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ (আরএমও) এবং পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায় নামে অ্যানেসথেটিস্ট সেই রাতে অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু তাঁরা অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের হাতে ছেড়ে ‘ডক্টর্স রেস্ট রুম’-এ বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই সংক্রান্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংগৃহীত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে চিকিৎসক সৌমেন দাসের দাবি, “৮ তারিখ রাতে পর-পর পাঁচটি সিজ়ার করেছি। পিজিটি-রা সঙ্গে ছিল। প্রসবের শেষে, শুধু প্রসূতির চামড়া সেলাইয়ের কাজ পিজিটিরা করেছে।”

Advertisement

পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব মেলেনি মোবাইল-বার্তার। সেই দিন অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত পাঁচ ‘পিজিটি’ কথা বলতে চাননি। যদিও মেদিনীপুর মেডিক্যালের আধিকারিকেরা জানান, তাঁরা যাবতীয় তথ্য তদন্তকারীদের কাছে জমা দিয়েছেন।

৮ জানুয়ারি রাতে অস্ত্রোপচারের পরেই পাঁচ প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং ১০ জানুয়ারি তাঁদের মধ্যে মামনি রুইদাসের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের দাবি, সাধারণ প্রসব যদিও প্রয়োজনে ‘পিজিটি’রা করাতে পারেন, কোনও ভাবে ‘সিজ়ার’ তাঁদের একক দায়িত্বে করার কথা নয়। এটা আইনবিরুদ্ধ। কারণ, অস্ত্রোপচারে জটিলতা হলে ‘পিজিটি’-দের পক্ষে তা সামলানো দুষ্কর। সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিসেস ডক্টর্স’-এর প্রাক্তন সভাপতি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “পিজিটিরা অপারেশন থিয়েটারে সিনিয়র চিকিৎসককে সাহায্য করতে পারেন, কাজ শিখতে পারেন বা বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে অস্ত্রোপচার করতে পারেন। কিন্তু কোনও ভাবেই সিনিয়র চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে বা নজরদারি ছাড়া অস্ত্রোপচার করতে পারেন না। সেটা নিয়মবিরুদ্ধ।” স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর রাজ্যে যত প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের ‘ডেথ অডিট’-এ ‘পিজিটি’-দের দিয়ে অস্ত্রোপচার করানো অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

যদিও অভিযুক্ত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস দাবি করছেন, “রিঙ্গার্স ল্যাকটেট দেওয়ার পরেই প্রসূতিদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ফলে, শেষ দু’টি সিজ়ারের আগে রোগীর বাড়ির লোককে দিয়ে বাইরে থেকে পাঁচ বোতল রিঙ্গার্স ল্যাকটেট কিনিয়েছিলাম। যে দুই প্রসূতি বাইরে থেকে কেনা স্যালাইন পেয়েছিলেন, তাঁরা ভাল আছেন।”

রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, “তদন্ত-রিপোর্ট জমা পড়েছে। সব সম্ভাবনাই দেখা হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement