পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি— নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার করে নিল জেলা পুলিশ। শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থেকে ফিরে যাওয়ার পরেই তাঁর ঘনিষ্ঠ অমূল্যের নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহারে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছেন ‘দাদার অনুগামী’রা। তবে সেই সঙ্গেই তাঁরা বলছেন, দাদা নিজেই নিরাপত্তারক্ষী ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। জনগণ পাশে থাকলে রক্ষীর প্রয়োজন নেই।
বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর দু’জন নিরাপত্তারক্ষীকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অমূল্য। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই এই নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার বলে মনে করছেন তিনি। এর আগে ২০১৫ সালে বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ থাকাকালীন তাঁর নিরাপত্তারক্ষী সরানো হয়েছিল।
শুক্রবার অমূল্য বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ যখন জেলা পরিষদ থেকে সবং এর বাড়িতে আসার পরে আমার নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে ফোন আসে, সবং থানায় গিয়ে রিপোর্ট করতে হবে। সেই মতো থানায় চলে যান তাঁরা।’’ অমূল্যের দাবি, নিরাপত্তারক্ষীরা যাওয়ার সময়ই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, কী হতে চলেছে। তাই তিনি ওই দুই নিরাপত্তারক্ষীদের বলেছিলেন, ‘আপনারা পুলিশের চাকরি করেন, আমার নয়। থানায় যাচ্ছেন সেখান থেকে যদি পুলিশ লাইন মেদিনীপুরে যেতে হয় তাহলে আমার মানবিকতার দিক থেকে আপনাদের সেখানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। যদি আপনারা আমার থেকে সেই ব্যবস্থায় রাজি থাকেন’।
অমূল্য বলেন, ‘‘থানায় যাওয়ার পর রাত ১০ টার সময় এক নিরাপত্তারক্ষী আমাকে ফোন করে জানান, যেখানে তাঁরা থাকতেন সেখান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সেই ঘরের চাবি আমার গাড়ির চালককে দেওয়া রয়েছে।’’
সোমবার সবংয়ের প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রভাত মাইতির বাড়িতে তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন শুভেন্দু। দেহাটি থেকে তেমাথানি পর্যন্ত শুভেন্দুকে নিয়ে আসতে মোটরসাইকেল মিছিল গিয়েছিল। অমূল্য মঙ্গলবার অভিযোগ করেছিলেন, যাঁরা শুভেন্দুকে নিয়ে আসতে বাইক নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের তিন-চারজনের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে শুরু হয় চাপানউতোর। তাছাড়া এলাকায় মাস্ক-স্যানিটাইজার বিতরণে শুভেন্দু অধিকারী ছবি ব্যবহার করতেন অমূল্য। তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য ‘প্রতিহিংসার তত্ত্ব’ উড়িয়ে দিয়েছেন। দলের এক জেলা এক নেতার কথায়, ‘‘কখন, কার জন্য নিরাপত্তারক্ষী প্রয়োজন তা ঠিক করেন পুলিশ আধিকারিকরা। কার নিরাপত্তারক্ষী তুলে নেওয়া হল সেটা আমাদের বলার বিষয় নয়।’’ এ বিষয়ে জেলা পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সফর নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন আধিকারিকেরা।
আরও পড়ুন: ঝুলিতে মাত্র ১, মহারাষ্ট্রে বিধান পরিষদ ভোটে ধাক্কা খেল বিজেপি
সবংয়ের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক তথা তৃণমূল সাংসদ মানস ভুঁইয়ার ‘বিরোধী’ হিসেবেই এলাকায় পরিচিত অমূল্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি খড়গপুর শহরের প্রশাসনিক সভায় যোগ দিতে এসে অমূল্য এবং সবংয়ের তৃণমূল বিধায়ক তথা মানসের স্ত্রী গীতা ভূঁইয়াকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলার।
আরও পড়ুন: পান্তা-মুড়ি খেয়ে আদর্শের জন্য লড়াই, গড়বেতার সভায় বললেন শুভেন্দু