সৌগত রায় ও শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সৌগত রায়ের দ্বিতীয় দফায় টানা ৯০ মিনিট আলোচনাতেও মীমাংসা হল না। ফলে শুভেন্দু-তৃণমূল সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এখনও সেই ঝুলেই রইল। তবে তৃণমূলের পক্ষে আশার কথা একটাই— আলোচনার দরজা কোনও পক্ষই এখনও পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়নি। আলোচনা কোন খাতে বইছে, সে সম্পর্কে উভয়পক্ষই মুখে কুলুপ এঁটেছে। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, আবার আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এর আগেও এক বার শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন সৌগত। সেই প্রথম পর্বের আলোচনাও অমীমাংসিতই ছিল। তাই সোমবার আবার দ্বিতীয় দফা আলোচনা হয় দু’জনের। সূত্রের খবর, শুভেন্দু আবার ‘কাজের স্বাধীনতা’র কথাই বলেছেন। দলের সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে শুভেন্দুর যে সমস্যা ছিল, তা মেটানো হবে— এমন কোনও নিশ্চয়তা দলের তরফে এখনও তাঁকে দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব জানাচ্ছেন, আলোচনার বিস্তারিত রিপোর্ট দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হবে। মমতা আপাতত রয়েছেন বাঁকুড়া সফরে। বিষয়টি তাঁকে টেলিফোনে জানানো হবে না কি তিনি কলকাতায় ফিরলে মুখোমুখি তাঁকে বিস্তারিত জানানো হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ঘটনার গুরুত্ব বুঝে প্রাথমিক ভাবে মমতাকে ফোনেই বিষয়টি জানিয়ে রাখা হবে বলে সূত্রের খবর। তার পর আরও আলোচনা হবে কি না, তা মমতাই ঠিক করবেন। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, শুভেন্দু অনড় থাকলে মীমাংসার সম্ভাবনা কম। পক্ষান্তরে, শুভেন্দু শিবিরের বক্তব্য, দলের তরফে ‘সদিচ্ছা’ থাকলে সমস্যার সমাধান অসম্ভব নয়। দল যদি মনে করে বিধানসভা ভোটে ‘ঐক্যবদ্ধ’ লড়াই করবে, তাহলে কিছুই অসম্ভব নয়।
সূত্রের খবর, শুভেন্দু সরাসরি আপত্তি জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের দল পরিচালনা নিয়ে। শুভেন্দু-শিবিরের বক্তব্য, মমতা-সহ অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের দল পরিচালনা নিয়ে শুভেন্দুর কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তাঁদের নীচে কাউকে মেনে নিতে তাঁর আপত্তি রয়েছে। শুভেন্দু-অনুগামীদের আরও বক্তব্য, যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুকে লাগাতার আক্রমণ করেছেন, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বাঁকুড়া সফরে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চেও এ দিন কল্যাণ ছিলেন। শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায, ‘‘একদিকে সৌগত’দা আলোচনা করছেন। অন্যদিকে দলনেত্রী সেই কল্যাণ’দাকে নিয়ে জেলা সফরে গিয়েছেন, যিনি শুভেন্দুকে লাগাতার আক্রমণ করেছেন। এর ফলে কী বার্তা যাচ্ছে? যেদিন আলোচনা হওয়ার কথা সেদিনই তো এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে!’’
আরও পড়ুন: মিম ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান, আমল দিচ্ছে না ওয়াইসির দল
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ‘খেজুরি দিবস’ উপলক্ষে শুভেন্দুর পদযাত্রা রয়েছে। এখন দেখার, তিনি সেই কর্মসূচিতে ওই বিষয়ে কিছু বলেন কি না। এখনও পর্যন্ত শুভেন্দু নিজে দল ছাড়ার বিষয়ে কিছু বলেননি। উল্টে শেষ জনসভাতেও বলেছএন, তিনি এখনও একটি দলের সদস্য। রাজ্য মন্ত্রিসভারও সদস্য। দলের নিয়ন্ত্রণকেরা তাঁকে তাড়াননি। তিনিও দল ছাড়েননি। আবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে তাড়িয়ে দেননি। তিনিও মন্ত্রিসভা ছাড়েননি। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘আমি এখনও একটি দলের প্রাথমিক সদস্য।’’ উৎসাহীরা শুভেন্দুর ‘এখনও’ শব্দটি নিয়ে সন্দিহান। তাঁদের মতে, শুভেন্দু বলেছেন, ‘এখনও’ আছেন। অর্থাৎ, চিরকাল আছেন বা ভবিষ্যতে থাকবেন, এমন নয়। তাঁরা আরও বলছেন, যখন শুভেন্দু বলছেন, তিনি ‘এখনও’ একটি দলে রয়েছএন, তখনও কিন্তু তিনি সংশ্লিষ্ট দলটির নাম নিচ্ছেন না। যেমন তাঁর কর্মসূচিতে দলনেত্রী মমতার ছবি দেখা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: মালদহে বার্জ উল্টে পর পর ৮টি লরি পড়ল গঙ্গায়, নিখোঁজ অন্তত ২০
তবে এসব চাপানউতোর ছাড়িয়ে স্পষ্ট— সোমবারের সৌগত-শুভেন্দু বৈঠক অমীমাংসিতই থেকে গিয়েছে। এখন দেখার, আবার কবে দু’জনের বৈঠক হয় বা আদৌ হয় নাকি। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, তেমন বুঝলে স্বয়ং দলনেত্রী শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই দাবির কোনও সমর্থন মেলেনি।
আরও পড়ুন: আলু-পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেন্দ্র কৃষি আইন বদলানোয়, মোদীকে তোপ মমতার