ফাইল চিত্র।
দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিগ-সমাবেশে যোগ আছে, এমন ৫৪ জনকে চিহ্নিত করে বুধবার তাঁদের কোয়রান্টিন বা নিভৃতবাসে পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবারেও উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ থেকে ওই সমাবেশে যাওয়া বেশ কিছু লোককে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। আর কারা ওই সভায় গিয়েছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করতে এ দিন রাজ্য জুড়ে খোঁজখবর চালানো হয়। নতুন সন্ধান পাওয়া অনেককেই নিভৃতবাসে পাঠিয়েছে রাজ্য।
দিল্লির ওই জমায়েতকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সমস্যার বিষয়টি দেরিতে রাজ্যকে জানানোয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছিলেন। সেই সঙ্গেই তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার এই বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করছে। ওই দিন ৫৪ জনকে চিহ্নিত করে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়। তবে এ দিন সরকারি ভাবে এ বিষয়ে প্রশাসনের শীর্ষ মহলের কেউ মুখ খোলেননি।
নিজামুদ্দিনের সমাবেশে যুক্ত আরও ৩৭ জনকে এ দিন শনাক্ত করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। বুধবার জেলার মহেশতলা, উস্তি, মন্দিরবাজার ও মগরাহাট থানা এলাকা থেকে ৪২ জনকে শনাক্ত করে কলকাতার হজ হাউসে পাঠানো হয়েছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই ৪২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও ৩৭ জনের খোঁজ পাওয়া যায়। এ দিন দিল্লির নিজামুদ্দিন-ফেরত এক ব্যক্তির খোঁজ মিলেছে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের নেহালপুর এলাকায়। বসিরহাট জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, ওই ব্যক্তির শারীরিক পরীক্ষার পরে সন্দেহজনক তেমন কিছু মেলেনি। তবে নিশ্চিত হতে আপাতত ১৪ দিনের জন্য তাঁকে বসিরহাট শিবহাটির মেরুদণ্ডীতে নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে।
নিজামুদ্দিনের সভায় গিয়েছিলেন, এমন ১০ বাসিন্দার খোঁজ মিলেছে মালদহে। তাঁরা ওই সমাবেশ থেকেই মুম্বই চলে যান। সেখানে নিভৃতবাসে রয়েছেন তাঁরা। উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে দু’জনের নাম এসেছে। কিসানগঞ্জ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজামুদ্দিনের ধর্মীয় সমাবেশ থেকে ১১ জন ফিরেছেন। তাঁরা সকলে বিদেশি নাগরিক। তাঁদের সকলকেই নিভৃতবাসে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। নিজামুদ্দিন-ফেরত ৩৭ জনের নিভৃতবাসের ব্যবস্থা হয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের তিনটি মসজিদে। এ দিন সেই মসজিদগুলিতে জীবাণুনাশক ছড়ায় পুরসভা।
তবলিগ-সভার সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের যোগ আরও বেড়েছে। বুধবার সাত জন ইন্দোনেশীয় মৌলবি-সহ ন’জনকে খড়্গপুর থেকে রাজারহাটে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছিল। এ দিন জানা যায়, জেলার আরও ১১ জন (মেদিনীপুরের সাত জন এবং ঘাটাল মহকুমার চার জন) দিল্লির ওই সভায় যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রত্যেককেই নিভৃতবাসে পাঠিয়েছে প্রশাসন। নিজামুদ্দিন-ফেরত পূর্ব মেদিনীপুরের যে-ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তিনি হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের আইসোলেশনে আছেন। এ দিন তাঁর লালারসের নমুনা কলকাতায় পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। তাঁর সংস্পর্শে আসা ন’জনকেও নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে।
জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ার জেলায় এক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। নিজামুদ্দিনের ধর্মীয় সভায় যোগদানের কথা স্বীকারও করেছেন তিনি। কয়েক দিন ধরে আলিপুরদুয়ারে তিনি এবং আরও ১৬ জন একসঙ্গে এক জায়গায় থাকছিলেন। নিজামুদ্দিন থেকে ফেরা এক প্রচারকের সন্ধান মিলেছে নদিয়াতেও। পুলিশি সূত্রের খবর, এখনও তাঁর শরীরে করোনার কোনও লক্ষণ নেই। তাঁকে গৃহ-নিভৃতবাসে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।